ডেনমার্কে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান। তাঁকে গ্রহণে কোপেনহেগেনের সম্মতি (এগ্রিমো) চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এখন শুধু অপেক্ষা সেই অনুমোদনের। তবে কূটনৈতিক মহলে আরও বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ মুখ লামিয়া মোর্শেদ, লুৎফে সিদ্দিকী ও হুসনা সিদ্দিকীকে রাষ্ট্রদূত করার প্রস্তাব।
বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্টেশনে রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার পদে এখন একাধিক শূন্যতা রয়েছে। যেমন—সিঙ্গাপুর, দ্য হেগ, থিম্পু, ইয়াঙ্গুন এবং তেহরান। তবে এসব গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য অভিজ্ঞ পেশাদার কূটনীতিকদের বদলে দীর্ঘদিন ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগী এবং উপদেষ্টাদের নামই উঠে আসায় তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
পেশাদার কূটনীতিকদের দাবি, তারা বছরের পর বছর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, দেশের স্বার্থে কাজ করে অপেক্ষা করছেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পোস্টিংয়ের জন্য। অথচ ‘মাখন খাওয়া’ কিছু সুবিধাভোগীকে শুধু সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় রাষ্ট্রদূত বানানোর উদ্যোগ চলেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে মানবজমিনকে বলেন, “তারা এতদিন গাছেরটা খেয়েছে, এখন তলারটা কুড়াতে চায়। তাদের জীবনকে আরও বর্ণিল করার জন্য কি এদেশে এত রক্ত ঝরেছে?” তিনি প্রশ্ন তোলেন—এ ধরনের প্রস্তাব পেশাদারদের প্রতি বৈষম্য এবং রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের পুরস্কৃত করার নামান্তর।
কে কোথায়?
- ড. নিয়াজ আহমেদ খান: ঢাবির ৩০তম উপাচার্য। ডেনমার্কে রাষ্ট্রদূত হতে চলেছেন। তার নিয়োগের সব প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন; এখন শুধু কোপেনহেগেনের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষা। এগ্রিমো পেতে ১ থেকে ৩ মাস সময় লাগতে পারে।
- লুৎফে সিদ্দিকী: প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষ দূত। সাবেক আইজিপি এওয়াইবিআই সিদ্দিকীর ছেলে। তার পছন্দ সিঙ্গাপুর পোস্টিং।
- হুসনা সিদ্দিকী: লুৎফে সিদ্দিকীর বোন, তথ্য-প্রযুক্তি খাতের পেশাজীবী। কেপিএমজি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক। নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূত হতে চান।
- লামিয়া মোর্শেদ: প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (চুক্তিভিত্তিক), ইউনূস সেন্টারের সাবেক নির্বাহী পরিচালক। ইউরোপে পোস্টিং চাইছেন। যদিও ইউরোপে ভ্যাকেন্সি নেই, তবে ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, সরকার চাইলে সেখানে কারও জায়গায় তাঁকে পাঠানো হতে পারে।
বিতর্ক বাড়ছে কেন?
যদিও প্রস্তাবিতদের মেধা, বিদেশি ডিগ্রি, পেশাগত অভিজ্ঞতা ও সামাজিক ব্যবসায় সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাচ্ছে না, তথাপি তারা অন্তর্বর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ সুবিধাভোগী হওয়ায় রাষ্ট্রদূত নিয়োগের প্রস্তাব অনেকের কাছে পক্ষপাতমূলক ও অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, রাষ্ট্রদূত নিয়োগে পেশাদার কূটনীতিকদের বাইরে ৩০ শতাংশ নিয়োগের ‘কোটা’ থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে—এই কোটা প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে বাইরের লোক নিয়োগ দেওয়াটা বিদ্যমান নিয়মকানুন ও ন্যায্যতার পরিপন্থী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কূটনীতির দীর্ঘদিনের ‘পেশাদার বনাম রাজনৈতিক নিয়োগ’ বিতর্ক নতুন করে উসকে দিল এই প্রস্তাবগুলো।


