জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা বহুল আলোচিত মামলায় আজ বৃহস্পতিবার রায়ের তারিখ ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (International Crimes Tribunal-1)। এই মামলার প্রধান আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। তাঁর সঙ্গে অভিযুক্ত আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান (Asaduzzaman Khan) এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun)।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে আজ রায়ের তারিখ জানানো হবে। অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মিসকেসটি দায়ের হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এরপর ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের প্রথম শুনানিতে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে চলতি বছরের ১৬ মার্চ মামুনকেও আসামি করা হয়। মামুন পরে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানিয়ে অপরাধে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনিই এখন এই মামলার একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি।
এ বছরের ১২ মে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের দপ্তরে জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এরপর ১২ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শুরু হয়ে শেষ হয় ২৩ অক্টোবর। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম মামলার যুক্তিতর্কে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।
প্রসিকিউশন গত ১ জুন শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন হয়। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে—১৪ জুলাই শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য; আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; ঢাকার চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা; এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে মারা—এই পাঁচ অভিযোগ।
আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান বর্তমানে পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। মামলার একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি সাবেক আইজিপি মামুন অভিযোগ গঠনের দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে রাজসাক্ষী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে, আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন যুক্তিতর্কে তাঁদের খালাস চেয়ে আবেদন করেন। মামুনের পক্ষ থেকেও খালাসের আবেদন জানানো হয় তাঁর আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদের মাধ্যমে।
মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে বলেও দাবি করেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। গতকাল বুধবার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে কোনো বিশৃঙ্খলা দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করবে।”
এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবে মিজানুল বলেন, “এই বিচারপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিক। সরকারের বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে অনেকে এর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে।”


