পাঁচ দফা দাবির পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি যোগ করেছে আন্দোলনরত আট দল। নিরপেক্ষতা হারানোর অভিযোগ তুলে তারা বলছে—উপদেষ্টা পরিষদে থাকা এই তিনজন এখন আর গ্রহণযোগ্য নন। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই প্রকাশ্যে নাম বলেনি; তবে দলগুলোর শীর্ষ সূত্র জানায়, সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি ইতোমধ্যে অবহিত করা হয়েছে।
দলগুলোর নেতাদের মতে, তারা মনে করছেন তিন উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং তাদের কার্যক্রমে নিরপেক্ষতার ঘাটতি প্রমাণিত হয়েছে। এই নিয়ে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ আট দল একাধিক বৈঠকে আলোচনা করেছে। নেতারা জানান, পূর্বনির্ধারিত রোববারের বৈঠকে বিষয়টি ফের তোলা হবে। বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে নাম প্রকাশ করা অথবা প্রধান উপদেষ্টাকে অফিসিয়ালি জানানো হতে পারে।
সূত্র আরও জানায়, জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া দুই তরুণ উপদেষ্টা এবং একজন সিনিয়র উপদেষ্টাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আপত্তি তুলেছে আট দল। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের (Dr. Syed Abdullah Mohammad Taher)।
এদিকে উপদেষ্টাদের নাম না বললেও, জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন—রোববারের আলোচনার পর সব পরিষ্কার হবে। একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল দুই তরুণ উপদেষ্টার প্রসঙ্গ উঠলে বলেন, “এটা তো আপনারাই জানেন।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম (Mahfuz Alam)-এর দুইটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরেই জামায়াতের সঙ্গে টানাপোড়েনের সূচনা। একটি পোস্ট দ্রুত সরিয়ে ফেললেও স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি—এনসিপি’র সম্পর্কে ভাঙন দেখা দেয়। এই ঘটনার পেছনেও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ভূমিকা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড ও ঢাকার নির্বাচন আয়োজনের ইচ্ছা প্রকাশ করায় আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া (Asif Mahmud Sojib Bhuiyan)-এর প্রতি অসন্তোষ বাড়ে জামায়াতের। তাদের দাবি—এই দুই উপদেষ্টা বিএনপি-ঘনিষ্ঠ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। একই সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকসহ ব্যাংকিং সেক্টরে নিয়োগ–বদলিতে আরেক উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়েও আপত্তি রয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমীর তাহের বলেন, তিন উপদেষ্টা সরাসরি বিএনপির প্রতি ঝুঁকে রয়েছেন এবং সরকারকে ‘মিসগাইড’ করছেন। রাজধানীর আল-ফালাহ মিলনায়তনে তিনি জানান, “কমপক্ষে তিনজন উপদেষ্টা সরকারকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তাদের নাম প্রধান উপদেষ্টাকে দেবো। ব্যবস্থা না নিলে প্রকাশ্যে জানাতে বাধ্য হবো।”
তিনি মনে করিয়ে দেন, আগস্টে মৎস্য ভবন মোড়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনেও তিনি সতর্ক করেছিলেন— সরকারের কিছু উপদেষ্টা নীলনকশা করে নির্বাচনের চেষ্টা করছেন। তাদের কথাবার্তা, রেকর্ড, মিটিংয়ের আলাপ—সবই আন্দোলনকারী দলগুলোর কাছে আছে। তাহের বলেন, “যদি জনগণ বুঝে যায় তারা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে বেইমানি করছে, তাহলে তাদের অবস্থা হবে পতিত ফ্যাসিবাদের চেয়েও খারাপ।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রতি তিনি বলেন, “আপনি ভালো মানুষ, কিন্তু আপনার আশপাশে সবাই ভালো নন। আপনার খুব কাছের কয়েকজন আপনাকে ভুল পথে পরিচালিত করছে। তাদের সরান, নইলে জনগণই সরিয়ে দেবে।”
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ (Maulana Jalaluddin Ahmad) জানান, তিন উপদেষ্টা সরাসরি একটি দলের পক্ষে কাজ করছেন—এ তথ্য তাদের কাছে আছে। প্রশাসনে রদবদল এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বিএনপিপন্থি কর্মকর্তাদের নিয়োগের অভিযোগও করেছেন তিনি। সরকারের প্রধানকে সাবধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।


