আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আঘাত হানে মাঝারি মাত্রার একটি ভূমিকম্প, যার উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী। রিখটার স্কেলে কম্পনটির মাত্রা ছিল ৫.৭। এতে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন এবং সরকারি হিসেবেই আহত হয়েছেন ৬০০ জনের বেশি মানুষ।
ঢাকায় প্রাণ গেল চারজনের
রাজধানীর পুরান ঢাকার কসাইটুলিতে একটি ভবনের রেলিং ধসে পড়ে প্রাণ হারান তিন পথচারী। নিহতরা হলেন—রাফিউল ইসলাম (২০), আব্দুর রহিম (৪৮) ও তাঁর ছেলে মেহরাব হোসেন (১২)। রাফিউল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে মুগদার মদিনাবাগ এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের রেলিং মাথায় পড়ে নিহত হন মাকসুদ (৫০) নামে এক নিরাপত্তাকর্মী। সকাল ১১টার দিকে দুর্ঘটনার পর তাঁকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দুপুরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নারায়ণগঞ্জে শিশুর মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দেয়াল ধসে মারা গেছে ১০ মাস বয়সী শিশু ফাতেমা। ইসলামবাগ এলাকায় এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন তার মা। তাঁকে ঢাকায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত শিশুর পরিবারকে প্রাথমিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
নরসিংদীতে মৃত্যু আরও পাঁচজনের
নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুরের গাবতলী এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল থেকে ইট পড়ে ছাদের ওপর ভেঙে পড়ে। এতে শিশু মো. ওমর (৮), তার বাবা দেলোয়ার হোসেন ও দুই বোন আহত হন। পরে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান ওমর, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তার বাবা দেলোয়ারও।
পলাশ উপজেলার মালিতা পশ্চিমপাড়ার কাজেম আলী ভূঁইয়া (৭৫) নিজ বাড়ির মাটির ঘরের দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে মারা যান। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়।
শিবপুর উপজেলার আজকীতলা পূর্বপাড়ায় গাছ থেকে পড়ে মারা যান ফোরকান মিয়া (৪৫)। আর একই উপজেলার ইসলামপাড়া নয়াপাড়ার বাসিন্দা নাসিরউদ্দিন (৬৫) ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে স্ট্রোক করে মারা যান বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসাইন।
সারাদেশে আহত ৬০০’র বেশি, বাড়তে পারে সংখ্যা
শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর-এর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ৬০৬ জন ভূমিকম্পে আহত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে, ১৬ জনকে গুরুতর অবস্থায় স্থানান্তর করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের তথ্য এখনো একত্রিত না হওয়ায় আহতের প্রকৃত সংখ্যা হাজার ছাড়াতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর ভূমিকম্পটিকে ‘মাঝারি মাত্রার’ বলে উল্লেখ করেছে। ভূকম্পনের স্থায়িত্ব খুব বেশি না হলেও এর প্রভাব ছিল বেশ তীব্র। আতঙ্কে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, কিছু এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটেছে।
সরকারি সহায়তা ও জরুরি সেবা
ঘটনার পরপরই সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস মাঠে নামছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রাথমিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। আহতদের চিকিৎসায় জরুরি পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূমিকম্পের এই ঘটনা দেশের দুর্বল ভবন নির্মাণব্যবস্থা ও নগর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। ভবিষ্যতের জন্য আরও সচেতনতা ও প্রস্তুতির ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।


