সমালোচনামূলক কনটেন্ট সরাতে ছয়মাসে গুগলে সরকারের ২৭৯টি অনুরোধ

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন—এই ছয় মাসে গুগল (Google)-এর কাছে ২৭৯টি কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অনুরোধগুলোর বেশির ভাগই ছিল সরকারের সমালোচনামূলক কনটেন্ট অপসারণের লক্ষ্যে, যার অধিকাংশই ইউটিউব (YouTube) প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত ছিল। তবে গুগলের সদ্য প্রকাশিত স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এসব অনুরোধে সাড়া দেওয়ার হার তুলনামূলকভাবে কম।

অ্যালফাবেট (Alphabet)-এর মালিকানাধীন গুগল তাদের নিয়মিত প্রকাশিত স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে জানায়, সরকার বা সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কনটেন্ট অপসারণের যে অনুরোধ এসেছে, তার মধ্যে ৬৫ শতাংশ অনুরোধে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি ছিল। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরকারের অনুরোধে অন্তর্ভুক্ত আইটেমের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৩টি। অথচ গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে এমন অনুরোধ এসেছিল ৩৩৭টি, যেখানে আইটেম ছিল ৪ হাজার ৪৭০টি। ওই সময় ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। পরে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।

চলতি বছরের অনুরোধগুলোর মধ্যে ১৮১টি ছিল সরাসরি সরকারের সমালোচনামূলক কনটেন্টের বিরুদ্ধে। এসবের প্রায় সবই ছিল ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিও বা পোস্ট। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রিত পণ্য ও সেবাবিষয়ক কনটেন্টের বিরুদ্ধে ছিল ৩৮টি এবং মানহানিকর কনটেন্ট নিয়ে করা হয়েছিল ৩২টি অনুরোধ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গুগলের কাছে সবচেয়ে বেশি অনুরোধ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তবে এসব অনুরোধের প্রেক্ষিতে গুগলের নেওয়া পদক্ষেপের বিশ্লেষণে দেখা গেছে:

  • ৬৫% অনুরোধে তথ্য যথেষ্ট ছিল না
  • ১৬.১% ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • ৯% কনটেন্ট আগেই সরানো হয়েছিল
  • ২.৫% কনটেন্ট আইনি প্রক্রিয়ায় সরানো হয়েছে
  • ৩.৭% কনটেন্ট সরানো হয়েছে গুগলের নীতির আওতায়
  • ৩.৫% ক্ষেত্রে কনটেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি

ইউটিউব, গুগলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে, তাদের কমিউনিটি গাইডলাইন ভাঙলে কনটেন্ট নিজ উদ্যোগে সরিয়ে থাকে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়কালে বাংলাদেশ থেকে মোট ৬ লাখ ২১ হাজার ৬৫৫টি ভিডিও সরানো হয়েছে ইউটিউব থেকে।

সরকারি পক্ষ থেকে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ যেসব কনটেন্টে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে কী ধরনের ছিল, তা এখনো সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়নি। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুরনো সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ জারি করেছে। এ অধ্যাদেশের ধারা ৮ অনুযায়ী, বিটিআরসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে কনটেন্ট ব্লক করার অনুরোধ জানাতে পারে।

আগের আইনেও এই বিধান ছিল। তবে নতুন অধ্যাদেশে আরও যোগ হয়েছে একটি শর্ত—কোনো কনটেন্ট ব্লক হলে সরকারকে স্বচ্ছতার স্বার্থে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।

এই প্রসঙ্গে ডিজিটালি রাইট (Digitally Right)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, “নতুন অধ্যাদেশে যেহেতু তথ্য প্রকাশের বিধান রয়েছে, সেহেতু সরকার যদি প্রকাশ করে কী ধরনের সমালোচনামূলক কনটেন্ট ব্লক করা হয়েছে, তা হলে জনগণও জানতে পারবে তাদের কণ্ঠ কোথায় রুদ্ধ হচ্ছে।”

তবে সরকার এখনো পর্যন্ত গুগলকে দেওয়া অনুরোধগুলোর বিস্তারিত প্রকাশ করেনি—যে তথ্য জনস্বার্থে জানানো জরুরি বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *