বাংলাদেশ-সৌদি মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় বিপাকে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি

বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মতো প্রধান ক্রেতারা ভারতীয় পেঁয়াজ থেকে সরে দাঁড়ানোয় রপ্তানিকারকদের মধ্যে চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বারবার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, বাজার অস্থিরতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার কারণে ভারতের রপ্তানি খাত এখন মন্দার মুখে।

ইকোনোমিক টাইমস-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আট মাসে বাংলাদেশে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, অথচ একসময় ভারতের মোট রপ্তানির প্রায় তিন-চতুর্থাংশ যেত বাংলাদেশেই।

একই সময়ে, সৌদি আরবও গত এক বছর ধরে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনছে না। ইরান ও ইয়েমেনের মতো দেশগুলো থেকে কম দামে পেঁয়াজ কিনে সৌদি এখন বিকল্প উৎসে ঝুঁকেছে। ফিলিপাইনও ভারতের বিকল্প হিসেবে নতুন সরবরাহকারীর দিকেই নজর দিচ্ছে।

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, সরকার স্থানীয় বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে হঠাৎ হঠাৎ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আন্তর্জাতিক ক্রেতারা ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাস এবং ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আরও পাঁচ মাস ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ রেখেছিল। এতে ভারত-নির্ভর দেশগুলো বিকল্প উৎসের দিকে যেতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ সেই সময় ভারতের প্রতি কূটনৈতিক আপত্তিও জানিয়েছিল।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে ৭ লাখ ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছিল, যা ছিল মোট রপ্তানির ৪২ শতাংশ। অথচ চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই রপ্তানি নেমে এসেছে মাত্র ১২,৯০০ টনে।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বোর্ড অব ট্রেডের সদস্য পাশা প্যাটেল বলেন, “আমরা শুধু বড় ক্রেতাদের হারাইনি, তারা এখন ভারতীয় বীজ ব্যবহার করে নিজেরাই উৎপাদন করছে।”

রপ্তানিকারক অজিত শাহ বলেন, “আমাদের পণ্যের মান ভালো হলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা বাজারে স্থিতিশীল অবস্থান ধরে রাখতে পারিনি। এখন ক্রেতারা কমদামে পেঁয়াজ পাচ্ছে বলে অন্য উৎসে চলে যাচ্ছে।”

ভারতের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে পেঁয়াজ একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য হলেও বারবার নিষেধাজ্ঞা ও অভ্যন্তরীণ মূল্যনিয়ন্ত্রণের কৌশল আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের অবস্থানকে দিন দিন দুর্বল করে তুলছে।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো ভারতীয় বীজ অবৈধভাবে সংগ্রহ করে নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানোয় আগামী দিনে ভারতের রপ্তানি বাজার আরও সংকুচিত হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *