পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina), তার বোন শেখ রেহানা (Sheikh Rehana) এবং ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক (Tulip Siddiq) সহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক রবিউল আলম এই বহুল আলোচিত মামলার রায় দেবেন।
মামলায় সাজা হলে যুক্তরাজ্যে ব্যাপক রাজনৈতিক সংকটে পড়তে পারেন টিউলিপ সিদ্দিক। তার ব্রিটিশ সংসদ সদস্য পদ ছাড়ার জন্য জনমতের চাপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ মামলার বাকি আসামিরা হলেন: গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (অব.) ইঞ্জিনিয়ার সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সাবেক পরিচালক নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। উল্লেখযোগ্যভাবে, আসামি খুরশীদ আলম বর্তমানে কারাগারে আটক আছেন।
মামলার সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি দুদকের উপপরিচালক সালাহউদ্দিনের দায়েরকৃত অভিযোগে বলা হয়, শেখ রেহানা ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে পূর্বাচল প্রকল্পে ১০ কাঠা প্লট নিজের নামে বরাদ্দ নেন। তদন্ত শেষে ১০ মার্চ দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ৩১ জুলাই আদালত অভিযোগ গঠন করে মামলার বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। মামলায় মোট ৩২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মামলার প্রেক্ষাপটে, এর আগে গত ২৭ নভেম্বর আরও তিনটি দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনাকে মোট ২১ বছরের, সজীব ওয়াজেদ জয়কে ৫ বছরের এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন অপর একটি আদালত।
টিউলিপের জন্য এ রায় হতে পারে নতুন সংকেত। প্লট কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হলে তার ব্রিটিশ এমপি পদ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তিনি ইতোমধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগের তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল (Daily Mail) এই অভিযোগ প্রথম প্রকাশ্যে আনে, যার পরপরই টিউলিপ সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন।
রবিবার ডেইলি মেইল আরও জানায়, টিউলিপ এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে এমপি পদ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এর আগেও গত ডিসেম্বরে রূপপুর প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তিনি একই ধরনের চাপের মুখে পড়েছিলেন। তখন তিনি মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও এমপি পদে বহাল ছিলেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনের সংসদ সদস্য।
এদিকে বাংলাদেশে টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলার স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একাধিক ব্রিটিশ আইনজীবী। তারা অভিযোগ করেন, মামলাটি পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার ঘাটতি রয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।


