বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)-কে চিকিৎসার জন্য লন্ডন নিয়ে যেতে জার্মানভিত্তিক এয়ারলাইন্স এফএআই অ্যাভিয়েশন গ্রুপের ‘চ্যালেঞ্জার ৬০৪’ মডেলের একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আগামী মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় ঢাকায় পৌঁছাবে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার অনুমতিও ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। চাইলে একইদিন রাত ৯টায় বিমানটি ঢাকা ছাড়তে পারবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAAB)-এর এক কর্মকর্তা।
তবে, লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতির মাঝেই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে এভারকেয়ার হাসপাতাল-এ গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড। তাদের মতে, খালেদা জিয়াকে আপাতত দেশে রেখেই চিকিৎসার চেষ্টা করা হচ্ছে। গতকাল রবিবার তার কিছু সিটি স্ক্যানসহ পরীক্ষার ফল ভালো এসেছে, যা বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ তৈরি করেছে।
বোর্ডের এক চিকিৎসক জানান, “আগের চেয়ে ম্যাডাম সুস্থ আছেন। উনি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখছেন, আমরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আগে তার অবস্থা আরও খারাপ ছিল, তখনো তিনি সেরে উঠেছিলেন। আশা করি এবারও দোয়ার মাধ্যমে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।”
খালেদা জিয়ার সিসিইউতে অবস্থানকাল নির্ভর করছে তার শারীরিক উন্নতির গতির ওপর। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকরা মিলিতভাবে তদারকি করছেন তার চিকিৎসা। শয্যাপাশে থেকে সবকিছু সমন্বয় করছেন পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান (Zubaida Rahman), যিনি সম্প্রতি লন্ডন থেকে দেশে এসেছেন। তিনি হাসপাতাল ও পারিবারিক বাসা ধানমণ্ডির মাহবুব ভবনের মধ্যে চলাফেরা করছেন এবং সিসিইউ টিমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
এদিকে, বিএনপি (BNP)-র নেতারা জানিয়েছেন, কাতার আমিরের সৌজন্যে আরও একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যা মেডিক্যাল বোর্ডের অনুমোদন পেলে যেকোনো সময়ই ব্যবহার করা যাবে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলেই লন্ডনে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী জানান, “এখন আমরা মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। ম্যাডাম আগের চেয়ে ভালো আছেন, সাড়া দিচ্ছেন, আশা করি সবাইর দোয়ায় তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।”
উল্লেখ্য, ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহুদিন ধরেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের জটিল রোগে ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে এবং তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
এরপর, তাকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিভিআইপি) ঘোষণা করে নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় এসএসএফ। এভারকেয়ার হাসপাতালের অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার-এর নেতৃত্বে ১২ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড তার চিকিৎসা তদারকি করছে। পাশাপাশি চীন ও যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরাও এই বোর্ডে যুক্ত হয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার বোর্ডের বৈঠকে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও, শুক্রবার তা স্থগিত করে বোর্ড। ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, “ওই সময় ফ্লাই করা সঠিক হবে না বলে বোর্ড মনে করে, তাই সিদ্ধান্ত কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে শরীরিক অবস্থা বলেই দেবে কবে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব।”


