অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া: সন্তুষ্ট অর্ধেকের বেশি, সমালোচনাও কম নয়

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)–এর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে কেন্দ্র করে জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন দেখা গেছে সদ্য প্রকাশিত এক জাতীয় জনমত জরিপে। গত বছরের জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর দায়িত্ব নেওয়া এই সরকার সম্পর্কে অধিকাংশ নাগরিক সন্তুষ্ট হলেও, এক বড় অংশের অসন্তুষ্টি কিংবা নিরপেক্ষ অবস্থানও জরিপে উঠে এসেছে।

প্রথম আলোর উদ্যোগে এবং কিমেকার্স কনসাল্টিং লিমিটেড (Kimakers Consulting Limited)–এর পরিচালিত ‘গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক–রাজনৈতিক বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ–২০২৫’-এ দেখা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের কাজকর্মে ৪৯.৩ শতাংশ মানুষ ‘কিছুটা সন্তুষ্ট’ এবং ৫.২ শতাংশ ‘অত্যন্ত সন্তুষ্ট’। অর্থাৎ, সন্তুষ্টির হার ৫৪.৫ শতাংশ। অন্যদিকে ২৩ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট নন, আবার অসন্তুষ্টও নন।

তবে ১৮.৯ শতাংশ উত্তরদাতা ‘কিছুটা অসন্তুষ্ট’ এবং ৩.৬ শতাংশ ‘অত্যন্ত অসন্তুষ্ট’ বলে মত দিয়েছেন—যা মিলে দাঁড়ায় ২২.৫ শতাংশ অসন্তুষ্টির হার। সব মিলিয়ে অসন্তুষ্টির হার ৪৫.৫ শতাংশ।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ঘটে গণ-অভ্যুত্থান, যার তিন দিন পর ৮ আগস্ট শপথ নেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকারের মেয়াদ ইতোমধ্যে ১৫ মাস পেরিয়েছে।

জরিপে ১১টি ক্ষেত্র ধরে সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতা মূল্যায়নের অনুরোধ করা হয়। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারকে সবচেয়ে সফল মনে করেন জনগণ। এসব ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি মানুষ সফলতার কথা জানিয়েছেন। অন্যান্য সফল ক্ষেত্রগুলো হলো:
– বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের বিচার
– লুটপাট-দুর্নীতির বিচার
– অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি
– নারীর চলাফেরার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

অন্যদিকে, যে ক্ষেত্রগুলোতে সরকার ব্যর্থ বলে মত দিয়েছেন ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
– কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি
– দুর্নীতি দমন
– পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা
– আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
– দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ

এছাড়া পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সরকারের কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাওয়া হলে, ৫১ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সেখানে ১৫ শতাংশ অসন্তুষ্ট এবং ৩৩ শতাংশ নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছেন।

জরিপে অংশ নিয়েছেন দেশের ৫টি নগর এবং ৫টি গ্রামীণ বা আধা শহর এলাকার মোট ১,৩৪২ জন নাগরিক (১৮–৫৫ বছর বয়সী)। এর মধ্যে ৬৭৪ জন পুরুষ ও ৬৬৮ জন নারী। অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও আয়ের প্রতিনিধি। জরিপ পরিচালিত হয়েছে ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত।

কিমেকার্স কনসাল্টিং জানায়, এটি একটি জাতীয় প্রতিনিধিত্বমূলক মতামত জরিপ, যদিও এটি নির্দিষ্ট কোনো নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করে না। অংশগ্রহণকারীরা মূলত সংবাদমাধ্যম পড়েন এবং ভোটাধিকার প্রয়োগের আগ্রহ রাখেন। জরিপের নির্ভরযোগ্যতার মাত্রা ৯৯ শতাংশ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *