চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকে ঘিরে সংগঠিত ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের (Obaidul Quader), যুবলীগ সভাপতিসহ মোট সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্ধারিত দিন ছিল, যার আগেই সম্পূর্ণ তদন্ত সমাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এর আগে গত ১৫ অক্টোবর পৃথক আরেক মামলায় ওবায়দুল কাদেরসহ মোট ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে আজকের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল-১।
অন্যদিকে, হত্যা ও গণহত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের আমলের ১৭ জন সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকে কঠোর নিরাপত্তায় আজ আনা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সকাল পৌনে ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারিক প্যানেলে আজ এসব মামলার অগ্রগতি নিয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া ১৭ জনের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক (Anisul Huq), সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম ও ফারুক খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান (Salman F Rahman) এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
প্রসিকিউশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আসামিদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে আলাদা ফরমাল চার্জ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে কারফিউ জারি করে ছাত্র-জনতার ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ আদালত আমলে নিয়েছে এবং শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছে।
এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রেখে গণহত্যা সংঘটনের অভিযোগে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ পলকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়েছে। জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়। সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর মামলায় ইতোমধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
সকালে ট্রাইব্যুনালের সামনে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে ছিলেন এবং প্রবেশপথে সবাইকে তল্লাশি করে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। এর আগেও চলতি বছরের ২০ এপ্রিল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৯ জনকে এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি ১২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাসহ আরও কয়েকজন আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল।


