আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসনে বিএনপি (BNP) জয়ী হবে বলে বিশ্বাস করছেন দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ। আর মানুষের পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami)। ‘গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ ২০২৫’ শিরোনামে এই জরিপটি করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিমেকারস কনসাল্টিং লিমিটেড, প্রথম আলোর উদ্যোগে।
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কে জিতবে, এই প্রশ্নে ৬৬ শতাংশেরও বেশি অংশগ্রহণকারী মনে করেন বিএনপি সবচেয়ে বেশি আসন পাবে। সব বয়স, লিঙ্গ ও পেশার মানুষদের মধ্যে প্রায় একই ধরনের মত পাওয়া গেছে। জামায়াতের পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা।
বিগত ৩৫ বছরে বিএনপি তিনবার সরকার গঠন করেছে। ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে দলটি। এরপর ২০০১ সালে চারদলীয় জোট গঠন করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় আসে। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৩০টি আসনে জয় পায়। ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে দলটি, যেগুলো একতরফা এবং ‘ডামি ভোট’ নামে পরিচিত। ২০১৮ সালের ভোটে কারচুপির অভিযোগ থাকলেও দলটি অংশ নেয় এবং মাত্র সাতটি আসনে জয়ী হয়। এই নির্বাচন ‘রাতের ভোট’ নামেও সমালোচিত হয়।
অন্যদিকে, জামায়াত অতীতে কখনো দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি। ১৯৯১ সালে তারা ১৮টি এবং ২০০১ সালে ১৭টি আসনে জয় পেয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক মাঠে দলটির উপস্থিতি বেড়েছে। বিশেষ করে জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের পর তাদের ছাত্রসংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। জরিপে তাই দেখা যাচ্ছে, জামায়াতের পক্ষে জনসমর্থন বেড়েছে এবং অনেকেই মনে করছেন তারা এবার বেশি আসন পেতে পারে।
আলোচনায় উঠে এসেছে আরও কিছু রাজনৈতিক দলের নাম। জরিপে ৭ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ বর্তমান নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের (Awami League) জয় দেখতে চান। জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতনের পর দলটির অনেক নেতা দেশ ছেড়েছেন বা পলাতক রয়েছেন। সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর আওতায় দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে।
নতুন করে আলোচনায় এসেছে তরুণদের নেতৃত্বাধীন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizen Party-NCP), যাদের পক্ষে মত দিয়েছেন ০.৮ শতাংশ উত্তরদাতা। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর (Islami Andolon Bangladesh) পক্ষে মত ০.১ শতাংশ।
একই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞাসা করা হয়, কোন দল জয়ী হলে দেশের জন্য ভালো হবে? সাড়ে ৫৭ শতাংশ মনে করেন, বিএনপি জয়ী হলে দেশ উপকৃত হবে। জামায়াতের পক্ষে মত দিয়েছেন সাড়ে ৩২ শতাংশ, আওয়ামী লীগের পক্ষে ৮.৫ শতাংশ, এনসিপির পক্ষে ০.৯ শতাংশ এবং জাপা ও ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে মাত্র ০.১ শতাংশ করে।
জরিপে উঠে এসেছে আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য—জাতীয় পার্টি (জাপা), যারা সর্বশেষ তিনটি সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে, তাদের পক্ষে মাত্র ০.১ শতাংশ মত পড়েছে। যদিও এই দলটিকে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ বলে সমালোচনা করা হয়, কারণ তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে সংসদে গেছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জাপা পেয়েছিল ৩৫টি আসন, ১৯৯৬ সালে ৩২টি ও ২০০১ সালে ১৪টি। সর্বশেষ ২০০৮ সালে মহাজোটের অংশ হয়ে তারা জিতেছিল ২৭টি আসনে।
এই মতামত জরিপটি চালানো হয় ২০২৫ সালের ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত। দেশের পাঁচটি শহর ও পাঁচটি গ্রাম বা আধা শহরাঞ্চলের মোট ১ হাজার ৩৪২ জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক এতে অংশ নেন। এর মধ্যে ৬৭৪ জন পুরুষ এবং ৬৬৮ জন নারী। অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও আয়ের মানুষ এবং তারা ছাপা বা অনলাইন সংবাদমাধ্যমের পাঠক। গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, এই জরিপ দেশের সাধারণ জনমতের প্রতিনিধিত্ব করে, যদিও এটি কোনো নির্বাচনী এলাকা নির্ভর নয়। জরিপের ফলাফলের কনফিডেন্স লেভেল ৯৯ শতাংশ।


