আজ পদত্যাগ করছেন উপদেষ্টারা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আজ বুধবার (৯ ডিসেম্বর) পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন দুই গুরুত্বপূর্ণ ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টা—তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে, যদিও কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে নাম প্রকাশে রাজি হননি।

জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা অথবা আগামীকাল বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল ঘোষণার আগেই দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ কার্যকর হবে বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল নিশ্চিত করেছে। গতকাল মঙ্গলবার তাঁরা বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন।

পদত্যাগের এই মুহূর্তকে ঘিরে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের আজ বুধবার বিকেল ৩টার সংবাদ সম্মেলন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিনি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। তবে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের বিষয়টিই ঘোষণা আসতে পারে।

সরকার-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)-এর সঙ্গে যমুনায় উপদেষ্টাদের এক নিয়মিত বৈঠকে মাহফুজ ও আসিফের পদত্যাগ নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানেই বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয় এবং সন্ধ্যায় সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে সিদ্ধান্তটি পৌঁছে দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে মাহফুজ ও আসিফকে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়। তখন তাঁরা সময় চেয়ে নেন। মাহফুজ আলম আগ্রহ দেখান মেয়াদ পূর্ণ করতে, এমনকি জানান তিনি নির্বাচন করবেন না। কিন্তু সরকারের অবস্থান ছিল, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ছাত্র প্রতিনিধিদের পদত্যাগ করা উচিত, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক বা না করুক।

২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে তৎকালীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের মধ্যে তিনজন উপদেষ্টা হিসেবে জায়গা পান। এরা হলেন নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং মাহফুজ আলম। এর মধ্যে নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র আহ্বায়ক হন। মাহফুজ আলম পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হন।

যদিও মাহফুজ ও আসিফের এনসিপিতে কোনো আনুষ্ঠানিক পদ নেই, তবুও দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাদের প্রভাব রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ?

আসিফ মাহমুদের রাজনৈতিক গন্তব্য এখনও অনিশ্চিত। তিনি স্বতন্ত্র না কোনো দল থেকে নির্বাচন করবেন—তা স্পষ্ট নয়। তবে তিনি ইতিমধ্যে ঢাকা-১০ আসন (ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ) থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। গত ৯ নভেম্বর ধানমন্ডিতে ভোটার হতে আবেদন করেন। বিএনপির পক্ষ থেকে ওই আসনে প্রার্থী ঘোষণা থাকলেও কিছু মহল বলছে, আসিফ মাহমুদ বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করেও নির্বাচন করতে পারেন।

অন্যদিকে, মাহফুজ আলমের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর-১ আসনে। তবে আসনটিতে ইতিমধ্যে বিএনপি বাংলাদেশ এলডিপি (LDP)-র চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমকে মনোনয়ন দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। ফলে মাহফুজ আলমের সমঝোতার মাধ্যমে সেখানে নির্বাচনের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গেছে।

এরই মধ্যে এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে একটি নতুন রাজনৈতিক জোট আত্মপ্রকাশ করেছে। এই জোট আসন্ন নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। এনসিপি ইতোমধ্যে তাদের দলীয় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করছে। রাজনৈতিক মহলের চোখ তাই এখন মাহফুজ ও আসিফের দিকে—তাঁরা এই জোট থেকে নির্বাচনে আসবেন কিনা।

এদিকে পদত্যাগ প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান পর্বে এই দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক সমীকরণকে নতুন মোড় দিতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *