বাংলাদেশের সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভায় একটি ব্যক্তিগত ঘটনার জন্য প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) ফাতেমী রুমি (Fatemi Rumi)-র প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, এক সময়কার এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি রুড (রূঢ়) ব্যবহার করেছিলেন, এবং সেই আচরণের জন্য তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে এ বিশেষ মতবিনিময় সভা। এতে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর মোট ১০১ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) এবং সঞ্চালনায় ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে তারেক রহমান বলেন, “আমি স্ক্রিনে একজনকে দেখতে চাচ্ছি, এটা একটু পার্সোনাল ব্যাপার। তারপরেও আমি এখানে উল্লেখ করতে চাচ্ছি। আম্মার সময় উনি ডিজিএসএসএফ ছিলেন। রুমি সাহেব, আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে একটা মিছিল হয়েছিল পুরান ঢাকা থেকে আমিন বাজার পর্যন্ত, যেখানে আমি ও আম্মা (বেগম খালেদা জিয়া) হাঁটছিলাম। সেদিন অনেক ভিড় ছিল, উত্তেজনাও ছিল। আপনি আমাকে কিছু বলেছিলেন, আমি সেদিন আপনার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেছিলাম। আমি খুব দুঃখিত। অনেক দিন চেয়েছিলাম আপনাকে রিচ করতে, পারিনি। আজ এই সুযোগে দুঃখ প্রকাশ করছি।”
তারেক রহমান এরপর তুলে ধরেন তার মা বেগম খালেদা জিয়া (Begum Khaleda Zia)-র এক বিশেষ দিনের স্মৃতি। তিনি বলেন, “সর্বশেষ উনি যে অনুষ্ঠানে (সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনায়) গিয়েছিলেন, সেটা ছিল ২১ তারিখে। যাওয়ার আগেই উনি অসুস্থ ছিলেন। ডাক্তাররা নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু অসুস্থ শরীর নিয়েও তিনি মনোবল দিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে তিনি মানসিকভাবে এতটাই চাঙ্গা ছিলেন, যেন বুঝাই যাচ্ছিল না তিনি একজন অসুস্থ মানুষ।”
তিনি আরও বলেন, “আমি এই ঘটনাটি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম, যেন বুঝতে পারেন জিয়া পরিবার ও সশস্ত্র বাহিনীর সম্পর্ক কতটা গভীর। উনার মন কোথায় আছে, সেটা এই ছোট্ট ঘটনার মধ্যেই প্রকাশ পায়। যেকোনো বাহিনী—আর্মি, নেভি বা এয়ারফোর্স—সবগুলোকে উনি কতটা সম্মান করেন, ভালোবাসেন, সেটা উনার আচরণেই বোঝা যায়।”
তারেক রহমান স্বৈরাচারী শাসনের সময় সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিয়েও কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, “সে সময় এমন একটা নেতিবাচক ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছিল যাতে বিএনপি, শহীদ জিয়া এবং খালেদা জিয়াকে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে দূরে দেখানো হয়। মেজর রেজা বা মেজর মান্নান যা বলেছেন, তা থেকেই এটা স্পষ্ট। তবে আমি বিশ্বাস করি, আজকের আলোচনার মাধ্যমে সেই ভুল ধারণা ভেঙে গেছে।”
এ মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, লে. কর্নেল (অব.) শামসুজ্জোহা, মেজর (অব.) রেজা করিম, মেজর (অব.) সামসুজ্জোহা, মেজর (অব.) জামাল হায়দার, মেজর (অব.) আজিজুল হক, কর্নেল (অব.) হারুনুর রশিদ, এয়ার কমোডর (অব.) শফিক আহমেদ, রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোস্তাফিজ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জয়নাল আবেদীন, কর্নেল (অব.) জগলুল, লেফটেনেন্ট (অব.) ইমরান কাজল, মেজর (অব.) গোলাম মান্নান চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) রেজাউর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) জামিল ডি আহসান বীর প্রতিক, ও কর্নেল (অব.) হান্নান মৃধা।
অনুষ্ঠানজুড়ে বিএনপির নেতৃত্ব, সেনা বাহিনীর প্রাক্তন সদস্যদের প্রতি সম্মান ও অতীত ভুলের জন্য দুঃখপ্রকাশ, সবমিলিয়ে ছিল এক আন্তরিক ও রাজনৈতিক কৌশলে ভরপুর সন্ধ্যা।


