আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম (Mahfuz Alam) ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া (Asif Mahmud Sajib Bhuiyan)। তাঁদের পদত্যাগের ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা পদ শূন্য হয়ে পড়বে—তথ্য ও সম্প্রচার, স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া।
সরকার–সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্ব এখন পুরোনো উপদেষ্টাদের মধ্যেই ভাগ করে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। সরকারের শীর্ষ মহলে আলোচনা চলছে, নতুন কাউকে না এনে দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে শেষ সময়টা পার করার।
জানা গেছে, বর্তমানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আদিলুর রহমান খান (Adilur Rahman Khan)-কে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। যদিও শুরুতে তিনি এ দায়িত্ব নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। মন্ত্রণালয়ের অতীত অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে তিনি দায়িত্ব নিতে সংশয় প্রকাশ করেন। তবে সরকারের নীতিনির্ধারকদের চিন্তা—এ সময় নতুন কাউকে দায়িত্ব দিলে সমন্বয়ে সমস্যা হতে পারে, তাই শেষ পর্যন্ত আদিলুরকে রাজি করানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত আদিলুর যদি এই দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তবে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেনকে।
অন্যদিকে, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (Syeda Rizwana Hasan)-কে তথ্য ও সম্প্রচার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে উপদেষ্টা ফারুকীর নাম আলোচনায় আছে।
গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)-এর নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র প্রতিনিধিদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম, মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ জায়গা পান।
নাহিদ ইসলাম প্রথমে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হন, পরে পদত্যাগ করে গঠন করেন নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন মাহফুজ আলম।
আসিফ মাহমুদ শুরুতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা থাকলেও পরে শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পান। এরপর স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে আসে।
ফলে একসময় তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন আসিফ মাহমুদ—যুব ও ক্রীড়া, শ্রম ও স্থানীয় সরকার। তবে পদত্যাগের ফলে তাঁর জায়গাগুলোয় নতুন করে দায়িত্ব ভাগ করে দিতে হচ্ছে সরকারকে।
সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে এমন রদবদল নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ উভয়েই জুলাই অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা ছাত্র প্রতিনিধিত্বের প্রতীক। তাঁদের পদত্যাগ এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টি এখন এনসিপির দিকে। যদিও এ দুজনের কেউ এখনো স্পষ্টভাবে কোনো দলের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেননি, তবে তাঁদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে।


