গৃহকর্মী আয়েশার স্বামী দিলো চাঞ্চল্যকর তথ্য, জানালো কি ঘটেছিল সেইদিন

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে মা-মেয়ে খুনের ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আয়েশার স্বামী রবিউল ইসলামকেও আটক করেছে পুলিশ। চারদিকে যখন এ হত্যার রহস্য নিয়ে সন্দেহ, তখনই রবিউল জানালেন, চুরি করে ধরা পড়ার কারণেই মা-মেয়েকে খুন করেন তার স্ত্রী আয়েশা।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল বলেছেন, ‘সে (আয়েশা) মনে করছে কিছু জিনিস চুরি করে আইনা আমারে দিব, কিছু টাকা-পয়সা পাইব। ল্যাপটপ, মোবাইল চুরি কইরা সে আহনের সময় তার ম্যাডাম দেইখা ফেলায়। পেছন থিকা ম্যাডাম ধইরা ফেলায়। তখন সে চাকু দিয়া মারছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ধইরা ছিল, ততক্ষণ পর্যন্তই চাকু দিয়া মারছে। এরপর তার মেয়ে আইলে তারেও মারছে।’

এর আগে বুধবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে মোহাম্মদপুর থানার একটি টিম অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা ও রবিউলকে ঝালকাঠীর নলছিটি উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করে।

মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর থানার ৯ জনের টিম এ অভিযান চালায়।

গত সোমবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে নিজের বাসায় খুন হন মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বাসার গৃহকর্মী আয়েশা ওই দিন বোরকা পরে ঢুকে স্কুল ড্রেস ও মাস্ক পরে বেরিয়ে যান। এ ঘটনায় গৃহকর্মীকে আসামি করে মামলা করেন গৃহকর্তা এম জেড আজিজুল ইসলাম।

পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার চার দিন আগে শাজাহান রোডের ৩২/২/এ নম্বর বাসার সাততলার বাসায় কাজ নেন ওই গৃহকর্মী। নিজেকে আয়েশা নামে পরিচয় দেন। মা ও মেয়েকে হত্যার পর নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান আয়েশা।

নিহত লায়লা আফরোজ ছিলেন গৃহিণী, আর মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ মোহাম্মদপুরের প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নাফিসার বাবা এম জেড আজিজুল ইসলাম উত্তরায় সানবিমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক।

ভবনের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নাফিসার বাবা স্কুলের উদ্দেশে সকাল ৭টার দিকে বের হয়ে যান। এর ঘণ্টাখানেক পর ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে ওই বাসায় প্রবেশ করেন গৃহকর্মী আয়েশা। দেড় ঘণ্টা পর ৯টা ৩৬ মিনিটে স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ওই স্কুল ড্রেস নাফিসার।

এদিকে কর্মস্থলে গিয়ে নাফিসার বাবা বাসায় ফোন করেও কাউকে পাননি। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বাসায় ফিরে স্ত্রী ও মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, মাকে হত্যার বিষয়টি বুঝতে পেরে মেয়ে নাফিসা ডাইনিং রুমে রাখা ইন্টারকম থেকে কাউকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হলে সেখানেই তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ওই সময় ধস্তাধস্তিতে ইন্টারকমের লাইন খুলে যায়। বাসায় তল্লাশি করে বাথরুমে একটি সুইচ গিয়ার চাকু ও একটি ফল কাটা ছুরি পাওয়া যায়।

ধারণা করা হচ্ছে, ওই ছুরি দুটি দিয়েই মা-মেয়েকে হত্যা করেন গৃহকর্মী আয়েশা। এ ঘটনায় ওই বাসার দারোয়ান মালেককে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *