২০১৫ সাল থেকেই আমার কণ্ঠ রুদ্ধ করা হয়েছিল: তারেক রহমানের অভিযোগ

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman) দাবি করেছেন, দীর্ঘ নয় বছর ধরে—২০১৫ সাল থেকে—তার কথা বলার মৌলিক অধিকার পুরোপুরি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি এই অভিযোগ তুলে ধরেন এবং সেই সময়ের দমন-পীড়নের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের কোনো সংবাদমাধ্যম—পত্রিকা, টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়া—তার কোনো বক্তব্য প্রকাশ না করার নির্দেশনা বহাল ছিল। তবুও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও আরোপিত নীরবতার মাঝেও তিনি অধিকার, গণতন্ত্র ও মানুষের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই চালিয়ে গেছেন বলে দাবি করেন। তারেক রহমানের ভাষায়, “সত্যের স্পিরিটকে আদেশ দিয়ে থামিয়ে রাখা যায় না।”

তিনি আরও লেখেন, টানা ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ যেন অন্ধকারের এক চাপা আবরণে ঢেকে ছিল। কারও কাছে এই অন্ধকার তীব্রভাবে ধরা দিয়েছে, কারও কাছে হয়েছে নীরব যন্ত্রণা। বিশেষ করে যাদের রাজনৈতিক অবস্থান ‘তৎকালীন পতিত সরকারের’ বিপরীতে ছিল, তাদের কাছে এটি ছিল প্রতিদিনের কঠোর বাস্তবতা। রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, মিথ্যা মামলা, নির্যাতন, ভয়কে সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলা—এগুলো ছিল সে সময়ের পরিচিত দৃশ্য। কত পরিবার অপেক্ষা করেছে প্রিয়জনের জন্য—যারা আর কখনো ঘরে ফেরেনি—সেটিও তিনি স্মরণ করেছেন।

এই বোঝা বিএনপির চেয়ে বেশি আর কেউ বহন করেনি বলেও দাবি করেন তিনি। তার ভাষায়, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু, মিথ্যা মামলা—সব জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেও সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির ঘরেই।

তবে একইসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, নির্যাতনের শিকার শুধু বিএনপি ছিল না—ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, পথচারী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সবাই ভয়াবহ সেই পরিবেশের ক্ষত বয়ে বেড়িয়েছে। মানবাধিকারের মৌলিক উপাদান—মর্যাদা, নিরাপত্তা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা—সবই ছিল হুমকির মুখে।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, তাকে কথা বলার মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে তার বক্তব্য প্রচার নিষিদ্ধ ছিল রাষ্ট্রীয় নির্দেশনায়। তবুও চাপিয়ে দেওয়া নীরবতার মধ্যে তিনি গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে জানান।

স্ট্যাটাসে তিনি দেশনেত্রী খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)-কে তখনকার কঠিন সময়ের “সাহস, ধৈর্য ও প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় প্রতীক” হিসেবে বর্ণনা করেন। তারেকের মতে, মিথ্যা মামলা, কারাবাস এবং রাজনৈতিকভাবে তাকে দমিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা ছিল দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতিফলন। তবুও খালেদা জিয়া কখনো তার গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে সরে যাননি।

ব্যক্তিগত বেদনার প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেন, তার মা—যিনি দেশের নেতা—নিজ হাতে সহ্য করেছেন নিজের ছেলেকে জেলে নেওয়ার এবং নির্যাতনের মানসিক যন্ত্রণা। অন্য এক ছেলেকে তারা চিরকালের জন্য হারিয়েছেন। বাংলাদেশের অসংখ্য নির্যাতিত পরিবারের মতো তাদের পরিবারও ছিল লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু তারেক রহমানের মন্তব্য—কষ্ট মানুষকে সবসময় তিক্ত করে না; অনেক সময় সেই কষ্ট মানুষকে আরও মহান করে তোলে—এটা তিনি তার মায়ের মধ্যেই প্রত্যক্ষ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, আজ বাংলাদেশকে প্রয়োজন রাজনীতির চেয়েও বড় কিছু—একটি ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র, যেখানে সবার মানবাধিকার নিশ্চিত থাকবে, যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, এবং ভিন্নমত গণতন্ত্রের স্বাভাবিক অংশ হয়ে থাকবে। কোনো নাগরিককে কেবল বিরোধী মতের কারণে নিপীড়িত হতে হবে না বা গুম হয়ে যেতে হবে না।

তারেক রহমান জানান, বিএনপি এখন প্রতিশোধের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে এবং সমাধানের পথে বিশ্বাসী। তাদের প্রতিশ্রুতি—কোনো বাংলাদেশিকেই রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না, সে যেই মতের হোক না কেন।

মানবাধিকার দিবসের প্রেক্ষাপটে তিনি আবরার ফাহাদ, মুশতাক আহমেদ, ইলিয়াস আলী, সাজেদুল ইসলাম সুমন, সাংবাদিক সাগর-রুনি—এবং অসংখ্য শহীদের কথা স্মরণ করেন, যাতে ভবিষ্যতে এমন নিপীড়ন ও দায়মুক্তি আর ফিরে না আসে।

তারেক রহমান লেখেন, বিএনপি মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি সহ্য করেছে, কিন্তু ভেঙে যায়নি; বরং সত্য, ন্যায়, জবাবদিহি, পুনর্মিলন এবং আইনের শাসনে বিশ্বাস রেখে আরও দৃঢ় হয়েছে। তিনি বলেন, তারা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চান—যেখানে প্রতিটি মানুষের কণ্ঠ, অধিকার ও জীবন সমানভাবে মূল্যবান, এবং মানবাধিকার হবে ভবিষ্যতের মৌলিক ভিত্তি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *