রাজশাহীতে ৩৫ ফুট গভীরে ক্যামেরা নামিয়েও নিখোঁজ শিশু সাজিদের কোনো খোঁজ মিলল না

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের জন্য খনন করা পরিত্যক্ত গর্তে পড়ে যাওয়া দুই বছরের শিশু সাজিদের কোনো খোঁজ এখনও পায়নি উদ্ধারকারী দল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একাধিকবার ক্যামেরা নামিয়ে ৩৫ ফুট পর্যন্ত অনুসন্ধান চালিয়েও শিশুটিকে দেখতে পারেননি। শুরু থেকেই শঙ্কা আর উৎকণ্ঠার মধ্যে সময়গুলো কাটছে শিশুটির পরিবার ও স্থানীয়দের।

তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়ন দুর্ভিক্ষপ্রবণ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই পানির তীব্র সংকট। এখানকার মাটির প্রায় ১২০ থেকে ১৩০ ফুট নীচেও সহজে ভূগর্ভস্থ পানি মেলে না। এ কারণে জমির মালিক কছির উদ্দিন প্রায় এক বছর আগে ৮ ফুট ব্যাসার্ধের একটি গভীর গর্ত খনন করেছিলেন নলকূপ বসানোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু পানি না পেয়ে কাজটি তখন আর এগোয়নি। সেই পরিত্যক্ত গর্তেই পড়ে যায় গ্রামের রাকিবুল ইসলামের দুই বছরের ছেলে সাজিদ।

বুধবার দুপুরে সাজিদ নিখোঁজ হওয়ার পরপরই ফায়ার সার্ভিস (Fire Service)–এর তিনটি ইউনিট উদ্ধার অভিযান শুরু করে। ক্যামেরা নামিয়েও যখন তাদের চেষ্টায় কোনো সাড়া মিলল না, বিকেল থেকে গর্তের পাশ ঘেঁষে ভেকু দিয়ে খনন শুরু করা হয়। রাত ১টা পর্যন্ত প্রায় ২৫ ফুট মাটি তোলা সম্ভব হয়েছে। উদ্ধারকারীরা বলছেন, বিকল্প পথ তৈরি করে শিশুটির কাছে পৌঁছাতেই তারা এই পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন।

উদ্ধারকাজ দেখার জন্য দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শত শত মানুষ জড়ো হয়ে পড়েছেন ঘটনাস্থলে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ঘটনাস্থলে রয়েছেন তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা খান (Naima Khan)। উদ্ধার তদারকি করছেন রাজশাহী স্টেশনের সহকারী পরিচালক দিদারুল ইসলাম (Didarul Islam)। তিনি বলেন, “আমরা ৩৫ ফুট পর্যন্ত ক্যামেরা পাঠিয়েছি, কিন্তু ভিকটিমকে দেখতে পাইনি। তাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করাই আমাদের লক্ষ্য। তবে সে বেঁচে আছে কি না, তাও নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। তাই পাশে খনন করে নিচে নামার পথ তৈরি করছি।”

ইউএনও নাঈমা খান জানান, উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে এবং সব বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আল্লাহ চাইলে শিশুটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেবেন।”

স্থানীয় মানুষের কান্নাভেজা আহাজারির মধ্যে শিশুটির মা রুনা খাতুন অসহায় কণ্ঠে বলেন, তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে সাজিদ মাঝের। তিনি জানান, তাঁদের একটি ট্রলি দেবে গেলে তিনি ছোট ছেলে সাদমানকে কোলে নিয়ে এবং সাজিদের হাত ধরে মাঠে আসেন। ফেরার সময়ই ঘটে দুর্ঘটনা।

রুনা বলেন, “আমি সামনে হাঁটতেছি, সাজিদ পেছনে। একটু পরে পেছনে ঘুরে দেখি—সাজিদ নাই। শুধু মা মা ডাক শুনতেছি।” তিনি জানান, গর্তের মুখে খড় বিছানো থাকায় সেটি বোঝা যায়নি। তাই মুহূর্তেই শিশুটি গর্তে পড়ে যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *