তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকা রাত। সেই রাতেই রাজশাহীর তানোর (Tanore), কয়েলের হাট মধ্যপাড়ায় নির্ঘুম কাটে এক মায়ের—রুনা বেগমের। তার হৃদয়ের টান, বুকভরা প্রতীক্ষা—শিশু সাজিদ (Sajid) কি আবার তাকে জড়িয়ে ধরবে? মঙ্গলবার রাত থেকে জ্বরে কাতর ছোট্ট ছেলেটিকে তিনি শেষবার দেখেছিলেন ঘরে। এরপর বুধবার দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা—রাত পেরিয়ে ভোর… আবার আরেক ভোর পেরিয়েও বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত, প্রায় ৩১ ঘণ্টা ধরে মায়ের সেই দৃষ্টির শেষ ছিল না। গর্তের কাছে দাঁড়িয়ে তার বুকফাটা আহাজারিতে মধ্যপাড়ার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছিল।
বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। জ্ঞান ফিরেই শুধু তাকিয়ে থাকতেন সেই চিকন গর্তের দিকে—চোখে একটাই প্রশ্ন, “আমার ছেলেটাকে কি আমি আবার জড়িয়ে ধরতে পারব?”
আট সেন্টিমিটার গর্তে শিশু, মানুষের প্রার্থনায় টানটান উত্তেজনা
মাত্র ৮ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের সেই ভয়ংকর সরু গর্ত। কত গভীরে নেমে গেছে সাজিদ—তার কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। কখন তাকে উদ্ধারে সফল হবে দল—এই আশা-নিরাশার মধ্যেই বুধবার রাত পেরিয়ে বৃহস্পতিবার সারাদিন উৎসুক মানুষের ঢল নামে এলাকাটিতে।
পরিত্যক্ত ডিপ টিউবওয়েলের পাশেই তিনটি এক্সকেভেটর রাতভর খনন চালায়। হাজারো মানুষ টানটান উৎকণ্ঠায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে—কখন বের হবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যেদিন ছোট্ট সাজিদকে তুলে আনা যাবে মাটির তল থেকে।
রাতভর নিজেদের ঘরে না ফিরে জায়গা ছেড়ে যাননি অনেকে। পাশের গ্রাম থেকে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন,
“শিশু সাজিদ গর্তে পড়ে থাকবে আর আমরা ঘুমাবো—এটা কি হয়? ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করছে, আমরাও জেগে ছিলাম; শুধু চাইছিলাম ও যেন সুস্থ অবস্থায় ওঠে।”
অনুমোদনহীন নলকূপ নিয়ে ক্ষোভ
তিনি জানালেন, যে গভীর নলকূপটি খনন করা হয়েছিল, সেটি পাশের গ্রামের ওছির আলী (Oshir Ali) নামে এক ব্যক্তি অনুমোদন ছাড়াই করেছিলেন। পরে পানি না ওঠায় সেটি পরিত্যক্ত হয়, কিন্তু গর্ত ভরাট না করায় আজ ঘটেছে এ বিপর্যয়। আমিনুলসহ অনেকেই এর বিচার দাবি করেছেন।
এদিকে স্থানীয়দের ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে যখন জানা যায়—৩১ ঘণ্টায় প্রায় ৬০ ফুট গভীর পরিখা খননের পরও পাওয়া যায়নি সাজিদের সন্ধান। অবহেলায় পরিত্যক্ত এ অবৈধ গর্ত না ভরাট করার দায়ে ক্ষোভ ঝরছে স্থানীয়দের কণ্ঠে।
তাদের কথায়, “অনুমোদনহীন এসব নলকূপ যেভাবে স্থাপন করা হয়, তার ফলেই আজ এমন হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি।” শিশু সাজিদের মা রুনা বেগম (Runa Begum) ও স্থানীয় কেউ-ই মেনে নিতে পারছেন না—কয়েক মুহূর্ত আগেও ঘরে থাকা সন্তান এক নিমিষে মাটির গভীরে হারিয়ে গেল!
উদ্ধার কাজের পাশে দাঁড়িয়ে শুধু একটাই সুর—**সাজিদের যেন কোনোভাবে ফিরে পাওয়া যায়।


