আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি না—এমন প্রশ্নে দোলাচলে থাকা রাজনৈতিক অঙ্গনে অবশেষে স্পষ্টতা এনেছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে ভোটের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করে নির্বাচন এবং জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে গণভোটের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন (AMM Nasir Uddin)। এর মাধ্যমে ‘ভোট আদৌ হবে কি?’—এই সংশয়ের অবসান ঘটে।
তবে এখন সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন—তারেক রহমান (Tarique Rahman) কি ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন?
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন এবং দীর্ঘদিন ধরেই স্বদেশে অনুপস্থিত। এই অবস্থায় তিনি বিদেশ থেকে ভোটার হতে পারবেন কি না এবং প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে পারবেন কি না—তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, সংবিধান এবং ভোটার তালিকা আইনে তারেক রহমানের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আইনগত বাধা নেই।
আইন অনুযায়ী, প্রার্থী হতে হলে তাঁকে অবশ্যই ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটার হতে হবে। চাইলে তিনি লন্ডন থেকেই ফরম-২ পূরণ করে দূতাবাসের মাধ্যমে বা অনলাইনে আবেদন করে ভোটার হতে পারেন। এমনকি মনোনয়নপত্রেও তিনি লন্ডন থেকে স্বাক্ষর করে ডাকযোগে পাঠাতে পারেন বা প্রতিনিধি মারফত জমা দিতে পারেন।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “তফসিল ঘোষণার পরও কমিশনের এখতিয়ার আছে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত করার। চাইলে তারেক রহমানও ভোটার হতে পারবেন। ভোটার না হলে কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না।”
আইনের ১৩ ও ১৫ ধারার আলোকে দেখা যায়, যদি কেউ বাংলাদেশের নাগরিক না হন, আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হন, যুদ্ধাপরাধ বা রাষ্ট্রদ্রোহমূলক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন—তাহলেই কেবল ভোটার হওয়ার অযোগ্যতা তৈরি হয়। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এমন কোনো রায় না থাকায় তিনি ভোটার হতে পারেন, বলছেন ইসি কর্মকর্তারা।
এই প্রসঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতারাও আশাবাদী। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে বলেন, “আমাদের নেতা (তারেক রহমান) খুব শিগগিরই আমাদের মধ্যে আসবেন। যেদিন তিনি দেশে পা রাখবেন, সেদিন যেন গোটা বাংলাদেশ কেঁপে ওঠে—এই প্রস্তুতি রাখতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির সুযোগ এসেছে। তারেক রহমান সেই নতুন নেতৃত্বে থাকবেন।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “তিনি দেশে ফিরবেন। ভোটার হবেন দেশে এসেই।”
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী—
– মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ: ২৯ ডিসেম্বর
– মনোনয়ন বাছাই: ৩০ ডিসেম্বর–৪ জানুয়ারি
– আপিল দায়ের: ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত
– আপিল নিষ্পত্তি: ১২–১৮ জানুয়ারি
– প্রার্থিতা প্রত্যাহার: ২০ জানুয়ারি
– প্রতীক বরাদ্দ: ২১ জানুয়ারি
– প্রচার কার্যক্রমের শেষ সময়: ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭:৩০ পর্যন্ত
এই সময়সীমার মধ্যেই তারেক রহমান যদি আইনি প্রক্রিয়া মেনে ভোটার হন, তাহলে তাঁর প্রার্থী হওয়ারও সুযোগ রয়েছে।
সব মিলিয়ে, তফসিল ঘোষণার পর ভোট নিয়ে সংশয় দূর হলেও তারেক রহমানের অংশগ্রহণ এখনো প্রশ্নচিহ্নের মধ্যেই রয়ে গেছে। তবে রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন—তিনি দেশে ফিরে চমক দিতে পারেন।


