রিটার্নিং কর্মকর্তা নোয়োগ আর গণভোটের প্রজ্ঞাপন জারি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত গণভোট উপলক্ষে দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। বৃহস্পতিবার রাতে কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত পৃথক দুইটি প্রজ্ঞাপনে এ নিয়োগ ও ভোটের বিস্তারিত সময়সূচি জানানো হয়েছে।

প্রথম প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৭ এর দফা (১) ও (২) এবং গণভোট অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ধারা ৫ অনুসারে, নির্বাচন কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং একইসঙ্গে গণভোট পরিচালনার জন্য দেশের প্রতিটি নির্বাচনি এলাকার জন্য রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করছে।’

এই নিয়োগের আওতায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের তিনজন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা—মোট ৬৯ জনকে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অধীনেই ৩০০টি সংসদীয় আসনের নির্বাচন ও একইসঙ্গে গণভোট পরিচালিত হবে।

একই রাতে জারি করা আরেকটি প্রজ্ঞাপনে, সংবিধান সংস্কার ইস্যুতে গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য বিস্তারিত ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি গত ২৫ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে “জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫” এর উপর একটি গণভোট আয়োজনের উদ্দেশ্যে অধ্যাদেশ জারি করেছেন।’

গণভোট অধ্যাদেশ ২০২৫-এর ধারা ৮ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬, বৃহস্পতিবার, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই নির্ধারিত পদ্ধতিতে, পৃথক ব্যালট পেপারের মাধ্যমে এই গণভোট গ্রহণ করবে। ভোটগ্রহণ চলবে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।

গণভোটের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ এর মাধ্যমে মতামত চাওয়া হবে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত চারটি মূল প্রস্তাবের উপর:

(ক) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ায় গঠিত হবে।

(খ) আগামী জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট—যেখানে একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে মনোনীত ১০০ সদস্য নিয়ে। সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

(গ) নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, বিরোধী দলের ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা—এই ৩০টি বিষয়ে জুলাই সনদে যে ঐকমত্য হয়েছে, তা বাস্তবায়নে বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকবে।

(ঘ) জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়িত হবে।

নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগে এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজন করা হচ্ছে, যা দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *