বিহারে ধর্ম জিজ্ঞাসার পর প্যান্ট খুলে পাশবিক নির্যাতন, মু’\সলিম ব্যক্তির মৃ’\ত্যু

বিহারের নাওয়াদায় একটি মর্মান্তিক ঘটনায় মু’\সলিম পরিচয়ের কারণে মোহাম্মদ আথার হুসেন (Mohammad Athar Husain) নামের এক ব্যক্তি উগ্র জনতার হিংস্র হামলার শিকার হয়ে শেষপর্যন্ত চিরতরে নিথর হলেন। গত ৫ ডিসেম্বর রাতে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ওই ঘটনার এক সপ্তাহ পর, শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) গভীর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি প্রাণ হারান।

ভ’\য়া’\বহ সেই রাতের অভিজ্ঞতা আথার নিজেই মৃত্যুর আগে একটি ভিডিও বার্তায় বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ৪-৫ জন লোক তাঁকে জোর করে থামিয়ে পকেট চেক করে, তারপর একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে তালাবদ্ধ করে। তাঁরা তাঁর মু’\সলিম পরিচয় নিশ্চিত করতে তাঁকে প্যান্ট খুলতে বাধ্য করে এবং তারপরই শুরু হয় নির্মম নির্যাতন।

“তারা আমার ওপর লোহার রড ও লাঠি দিয়ে হামলা করে, আঙুল ভেঙে দেয়, বুকের ওপর উঠে আমাকে মাড়িয়ে দেয়,” ভিডিওতে কাঁপা গলায় বলেছিলেন আথার। তিনি জানান, তাঁকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টাও করা হয়—গায়ে ঢেলে দেওয়া হয় পেট্রল।

এতেও ক্ষান্ত হয়নি হামলাকারীরা। তারা প্লাস দিয়ে আথারের পা, আঙুল ও কান থেঁতলে দেয় এবং ইট দিয়েও মারধর করে। তাঁর মুখ থেকে রক্তপাত শুরু হয়। এরপরই একজন পথচারী পুলিশকে ফোন করলে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

আথার ছিলেন রোহ ও আশপাশের অঞ্চলের পরিচিত কাপড় বিক্রেতা। প্রায় দুই দশক ধরে এই কাজ করতেন তিনি। ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মৃত্যুর আগে সাংবাদিকদের তিনি জানান, “আমিই ছিলাম পরিবারের একমাত্র ভরসা। এখন আমার পরিবার কীভাবে চলবে জানি না।”

এই ঘটনায় আথারের স্ত্রী শবনম পারভীন ১০ জন অভিযুক্ত এবং আরও ১৫ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করেছেন। ইতোমধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ—তাঁরা হলেন সনু কুমার, রঞ্জন কুমার, শচীন কুমার এবং শ্রী কুমার। অন্যদের গ্রেফতারে তল্লাশি চলছে।

রোহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার জানিয়েছেন, ঘটনার পরপরই একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং পুলিশ গুরুত্বসহকারে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

এই ঘটনার পটভূমিতে উঠে এসেছে নাওয়াদা এলাকার সাম্প্রতিক অতীতের আরও কিছু অশুভ স্মৃতি। ২০২৩ সালেই এখানে একাধিক সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ফেব্রুয়ারিতে দু’জন যুবককে পি’\টিয়ে হ’\ত্যা এবং আগস্টে জাদুবিদ্যার অভিযোগে এক বৃদ্ধ দম্পতির ওপর জনরোষ—সবই বলছে, এলাকাটিতে সহিংসতা ও উগ্রতার বিস্তার ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

এই ঘটনাটি আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে, কেবল পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে চিহ্নিত করে এমন হিংসাত্মক আচরণ কেবল একজন ব্যক্তির জীবন শেষ করে না—ছিন্নভিন্ন করে দেয় একটি পরিবারের ভবিষ্যৎকেও।

সূত্র: দ্য অবজারভার পোস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *