আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামিনে কারামুক্ত হয়ে বাইরে অবস্থান করা চিহ্নিত সন্ত্রা’\সী’\দের কার্যক্রম নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনী পরিবেশকে ঘিরে আরও চো’\রাগো’\প্\তা হ’\ামলা’\র আশঙ্কাও করছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। গতকাল রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বিশেষ জরুরি বৈঠকে এসব আশঙ্কা ও করণীয় নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।
পরিস্থিতি যাতে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সে লক্ষ্যে বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্পষ্ট ও কড়া বার্তা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission of Bangladesh)। বৈঠকে অধিক সংখ্যক চেকপোস্ট বসিয়ে সন্ত্রা’\সী’\দের চলাচল ও কার্যক্রম সীমিত করা, বাইরে ঘুরে বেড়ানো সন্ত্রা’\সী’\দের গ্রে’\প্\তার’\ করা, অবৈধ অস্ত্র ও হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র–গো’\লা’\বা’\রু’\দ উদ্ধারে বিশেষ অভিযান জোরদারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন (A M M Nasir Uddin)-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় চার নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। একই সঙ্গে বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (Border Guard Bangladesh), আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার অংশ নেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট রোডে ঘটে যাওয়া এক চো’\রাগো’\প্\তা হ’\ামলা’\র ঘটনা বৈঠকের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায়। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তির অনুসরণে পড়েন। একপর্যায়ে হাদিকে বহনকারী অটোরিকশার কাছে গিয়ে তার মাথায় গু’\লি’\ করে হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। বর্তমানে ওসমান হাদি একটি বেসরকারি হাসপাতালে জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে ইসি।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, চো’\রাগো’\প্\তা হ’\ামলা’\র প্রবণতা থাকলেও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ইসির কোনো আশঙ্কা নেই। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে—নির্বাচন বানচালের যেকোনো চেষ্টা ব্যর্থ হবে এবং নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, শরিফ ওসমান হাদির ওপর চো’\রাগো’\প্\তা হ’\ামলা’\র ঘটনা সবাইকে উদ্বিগ্ন করেছে। বিশেষ বৈঠকে এই ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আলোচনায় উঠে এসেছে, যাকে সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করা হচ্ছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই সখ্য গড়ে ভুক্তভোগীর খুব কাছাকাছি ছিলেন। তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং অতীতে অপরাধের রেকর্ডও আছে। একই সঙ্গে ‘রেবেল হান্ট’ অপারেশন শুরুর পর যেসব সন্ত্রা’\সী’\ গ্রে’\প্\তার’\ হয়েছিল, তাদের একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে জামিনে মুক্ত হয়ে বাইরে অবস্থান করছে—এ বিষয়টিও আলোচনায় গুরুত্ব পায়।
সানাউল্লাহ জানান, এই চো’\রাগো’\প্\তা হ’\ামলা’\ কোনো বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ নাকি এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা—তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যদি এটি বড় পরিকল্পনার অংশ হয়ে থাকে, তাহলে ঘটনাপূর্ব পর্যায়ে বাহিনীগুলোর কোনো ঘাটতি ছিল কি না, কিংবা হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে পারায় কোনো ফেইলিউর রয়েছে কি না—এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের চো’\রাগো’\প্\তা হ’\ামলা’\র সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সামনেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে—এ আশঙ্কা মাথায় রেখেই এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে, যাতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যায়।
বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে একক ও স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে—যারা নির্বাচন বানচাল, প্রতিহত বা ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে, তারা ব্যর্থ হবে। পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী বাহিনী সর্বোচ্চ দৃঢ়তা দেখাবে। নির্বাচন কমিশনের অবস্থানও পরিষ্কার—নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় নেই, নির্বাচন সময়মতোই অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, জামিনে বের হওয়া চিহ্নিত সন্ত্রা’\সী’\দের পুনরায় গ্রে’\প্\তার’\ করে আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। অবৈধ অস্ত্র, গো’\লা’\বা’\রু’\দ এবং হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান জোরদার করা হবে। ‘রেবেল হান্ট’ নামে যে অভিযানের প্রথম ধাপ আগে শুরু হয়েছিল, তার দ্বিতীয় ধাপ শনিবার থেকে শুরু হয়েছে এবং এটি সমন্বিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। একই সঙ্গে সব বাহিনীর গোয়েন্দা তথ্য সমন্বয় ও গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকা, দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চল ও রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলে সাম্প্রতিক কিছু প্রবণতার সঙ্গে বৃহত্তর কোনো ঘটনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সহযোগী বা বন্ধু সেজে যারা কাছে আসে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, মাঠপর্যায়ের রাজনৈতিক কর্মীদের বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, সহযোগীর ছদ্মবেশে নাশকতাকারীরা অনুপ্রবেশ করতে পারে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক দোষারোপের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রা’\সী’\রা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ও অপরিণত তথ্য প্রচার অনেক সময় সন্ত্রা’\সী’\দের উসকানি দেয় বা পালাতে সহায়তা করে—এগুলো রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় রয়েছে বলেও জানানো হয়।
সন্ত্রা’\সী’\ কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত অনেক আসামি জামিনে বাইরে থাকায় বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে সানাউল্লাহ বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ করে যাকে বর্তমানে সন্দেহ করা হচ্ছে, তিনিও আগে আইনি হেফাজতে ছিলেন এবং জামিন পেয়ে বেরিয়ে এসেছেন। ফলে সামনে থাকা এই রেফারেন্স মাথায় রেখে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে বিশেষ নজরদারি জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকের শুরুতেই শরিফ ওসমান হাদিকে গু’\লি’\ করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, “এই ঘটনাটা আমার কাছে মনে হয়েছে, যেন আমার মাথার ওপর বাজ পড়েছে। আমি একদিন তপশিল ঘোষণা করলাম, আর পরদিনই এমন ঘটনা ঘটল। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।”


