রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার সাংবাদিক আনিস আলমগীর (Anis Alamgir)–কে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আদালতে হাজির করা হয়। রিমান্ড শুনানির সময় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, যারা তাকে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের অনুগত বানাতে চায়, সেটি তাদেরই সমস্যা। তার ভাষায়, ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—তাতে তার কিছু বলার নেই।
এ মামলায় পুলিশ আনিস আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান এ রিমান্ড আবেদন দাখিল করেন। বিকাল ৫টা ৮ মিনিটে আনিস আলমগীরকে আদালতের হাজতখানায় আনা হয়।
আদালতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আনিস আলমগীর বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি একজন সাংবাদিক। আমি ক্ষমতাকে প্রশ্ন করি। দুই যুগ ধরে আমি এটাই করে আসছি। আমার কাজ হলো প্রশ্ন তোলা, কারও কাছে নতজানু হওয়া নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে যারা নির্দিষ্ট দলের গোলাম বানাতে চায়, এটা তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা। আমার ফেসবুকে যা বলি, সবই প্রকাশ্যে। এখানে অপ্রকাশিত কিছু নেই।’
নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় তিনি উল্লেখ করেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস (Dr. Yunus)–এর বাড়িতে হামলার প্রসঙ্গ তিনি তুলেছিলেন একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। তার ভাষায়, ৩২ নম্বরে হামলার ঘটনাকে তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতি হিসেবে দেখেছেন এবং বলেছেন—এ ধরনের রাজনীতি শেষ পর্যন্ত ফিরে আসে। তিনি বলেন, জুলাইয়ের স্পিরিট কীভাবে বাড়তে পারে, সে বিষয়েও তিনি কথা বলেছেন। কিন্তু এতে তার অপরাধ কোথায়, সেটি তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তার সঙ্গে কারও কোনো যোগসূত্র নেই এবং আবারও উল্লেখ করেন, ড. ইউনূস চাইলে পুরো দেশকেই কারাগার বানাতে পারেন।
এর আগে রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর আনিস আলমগীরকে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ধানমন্ডি এলাকার একটি জিম থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাকে নেওয়া হয় এবং রাত আটটার দিকে ডিবি কার্যালয়ে পৌঁছান। সেখানে তাকে জানানো হয়, ডিবিপ্রধান তার সঙ্গে কথা বলবেন।
সোমবার বেলা ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে ডিবিপ্রধান মো. শফিকুল ইসলাম (Md. Shafiqul Islam) জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা একটি মামলায় সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পরবর্তীতে জানা যায়, ‘জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স’ (July Revolutionary Alliance) নামের একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ রবিবার রাত ২টার দিকে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাংবাদিক আনিস আলমগীরের পাশাপাশি অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন (Meher Afroz Shaon)–সহ মোট পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।


