গ্রামীণ ব্যাংক ও জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে হা’\মলা উসকানির অভিযোগে আনিস আলমগীরের রিমান্ড শুনানি

গ্রামীণ ব্যাংক ও জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে হা’\মলার উসকানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সাংবাদিক আনিস আলমগীরের বিরুদ্ধে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালতে রিমান্ড শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ এ অভিযোগ তোলে।

এদিন আনিস আলমগীরকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক মুনিরুজ্জামান। রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলেন, আনিস আলমগীর তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একাধিক পোস্ট দেন, যেখানে তিনি লিখেছেন—জুলাই স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রামীণ ব্যাংকে হা’\মলা হবে। এসব পোস্টের মাধ্যমে তিনি সরকার উৎখাত এবং দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, দেশের স্বার্থ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। তার সঙ্গে আর কারা সম্পৃক্ত, এসব কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য কী—তা উদ্‌ঘাটন করা প্রয়োজন।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী কামরুন্নাহার দীপু আদালতে বলেন, আনিস আলমগীর টকশোতে গিয়ে এসব কথা বলেছেন। টকশোতে অনেক ধরনের কথাই হয়, এর পেছনে সবসময় কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। মাননীয় প্রেস সচিবও বলেছেন—মন খুলে সমালোচনা করতে। নির্ভীকভাবে মন্তব্য করাই গণতন্ত্রের অংশ। কথার জবাবে কথা দিয়েই প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়, এটিই গণতন্ত্রের মূল স্পিরিট। তিনি দাবি করেন, আনিস আলমগীর জুলাই আন্দোলনের মূল চেতনা বাস্তবায়ন দেখতে চান, এর বাইরে তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।

শুনানিতে অপর একজন আইনজীবী বলেন, আনিস আলমগীর ইরাক যুদ্ধে গিয়ে লাইভ সম্প্রচার করেছেন। তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের একজন সমালোচক। যারা টকশো বা সাইবার স্পেসে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রা’\স বিরোধী মামলা চলতে পারে না।

শুনানির একপর্যায়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে নিজেই বক্তব্য দেন সাংবাদিক আনিস আলমগীর। তিনি বলেন, আমি একজন সাংবাদিক। আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করেছি। তালেবানরা আমাকে অ্যারেস্ট করেছিল। আমি সেখান থেকে বেঁচে ফিরেছি। আমি মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছি, মৃত্যুকে আর ভয় করি না।

তিনি আরও বলেন, আমি গত দুই দশক ধরে ক্ষমতাকে প্রশ্ন করে এসেছি। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছি। ইউনূস সরকারেরও সমালোচনা করি এবং ভবিষ্যতে যারা সরকারে আসবে, তাদেরও করব। এটা আমি করেই যাব। আমার জীবনে নতজানু হওয়ার কোনো ইতিহাস নেই। আমি কোনো সুবিধা গ্রহণ করিনি। আমাকে সরকারের গোলাম বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। টকশোতে যা বলেছি, তা প্রকাশ্যেই বলেছি—এখানে অপ্রকাশিত কিছু নেই।

গ্রামীণ ব্যাংক ও জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে হা’\মলা হতে পারে—এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে আনিস আলমগীর বলেন, একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে তিনি এসব কথা বলেছেন। যখন ৩২ নম্বর ভেঙে দেওয়া হয়, তখন আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে ঢুকে পড়ি। তিনি বলেন, জুলাইয়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগ চেয়েছিলেন, আর এখন তাকে জুলাইয়ের চেতনা শোনানো হচ্ছে। গত ১৩ নভেম্বর অবরোধে আওয়ামী লীগের জ্বালাও-পোড়াওয়ের প্রেক্ষিতেই এসব মন্তব্য করেছেন। তার বক্তব্যের সঙ্গে কারও যোগসূত্র নেই বলেও দাবি করেন তিনি। আসামিদের মধ্যে শাওন ছাড়া কাউকে তিনি চেনেন না বলেও জানান। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বলেন, এখন ড. ইউনূস যদি দেশকে কারাগার বা দোজখ বানাতে চান, বানাতে পারেন।

গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গে আনিস আলমগীর আরও বলেন, এসব বক্তব্য আসলে তেমন কিছু নয়। দেশের বাইরে থেকে দুজন ইউটিউবার বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা ও নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। টকশোতে একমাত্র তিনিই এসব কথা বলেছেন। তার দাবি, ওই দুই ব্যক্তি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে প্রভাবিত করেছে এবং সেই দল প্রধান উপদেষ্টাকে প্রভাবিত করেছে।

সব শুনানি শেষে আদালত আনিস আলমগীরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

এর আগে, ১৪ ডিসেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডির ২ নম্বর এলাকার একটি জিম থেকে বের হওয়ার পর আনিস আলমগীরকে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ) (Dhaka Metropolitan Detective Branch)। পরে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

রাতেই আনিস আলমগীর, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রা’\স বিরোধী আইনে মামলা করেন জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ (জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স) (July Revolutionary Alliance)। মামলার অপর আসামিরা হলেন—মডেল মারিয়া কিসপট্টা (ফ্যাশন মডেল) ও ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ (উপস্থাপক)।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়লেও তার অনুসারীরা বিভিন্ন কৌশলে দেশে অবস্থান করে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অবকাঠামো ধ্বংসের লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে আসামিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন টেলিভিশন টকশোতে বসে নিষিদ্ধ সংগঠনকে ফিরিয়ে আনার গুজব ও প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে।

এসব পোস্ট ও বক্তব্যের ফলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা অনুপ্রাণিত হয়ে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করা এবং অবকাঠামো ধ্বংসের লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ ও সন্ত্রা’\সী কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে বলেও মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *