বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ‘জয়বাংলা’ ও ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান ঘিরে উত্তপ্ত মুক্তাগাছা উপজেলা প্রশাসনের মঞ্চ

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা (Muktagacha Upazila)-তে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত আলোচনা সভা হঠাৎ করেই উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্য চলাকালীন এক মুক্তিযোদ্ধার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি ঘটে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা বছিরউদ্দিন তার বক্তব্যে ‘জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman)-এর নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এবং তিনিই জাতির পিতা। তার বক্তব্যে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালে ‘জয় বাংলা’ ছাড়া অন্য কোনো স্লোগান প্রচলিত ছিল না। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধেও মন্তব্য করেন।

তার বক্তব্য শেষ হতেই সভাস্থলে উপস্থিত একটি পক্ষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মুহূর্তের মধ্যেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং সভামঞ্চে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। প্রতিবাদ জানাতে জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক খাইরুল ইসলামসহ উপস্থিত ছাত্র-জনতা মঞ্চে উঠে পড়েন।

পরবর্তীতে বিজয় দিবসের মঞ্চে জুলাই আন্দোলনে আহত আল মামুন মুজিববাদ ও ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন এবং ওই মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যের বিচার দাবি করেন। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। উদ্ভূত অবস্থায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কৃষ্ণ চন্দ্র অনুষ্ঠান স্থগিত ঘোষণা করেন।

অনুষ্ঠান স্থগিতের পর মুক্তিযোদ্ধারা সভাস্থল ত্যাগ করলেও জুলাইযোদ্ধা ও আহতদের একটি অংশ সেখানে অবস্থান করে বিচার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। এ বিষয়ে জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘জয়বাংলা’ স্লোগান নিয়ে কোনো আপত্তি ছিল না। তার অভিযোগ অনুযায়ী, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেওয়ার পরই উপস্থিত ছাত্র-জনতা প্রতিবাদ জানায়।

পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জুলাইযোদ্ধা, আহত ব্যক্তিবর্গ, মুক্তিযোদ্ধা এবং গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জুলাইযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পুরো ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ (Awami League)-এর নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দের নেতৃত্বে আসন্ন নির্বাচনি পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতেই এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান জানান, মুক্তিযোদ্ধার একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল, তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কৃষ্ণ চন্দ্র বলেন, বিজয় দিবসের মঞ্চে মুক্তিযোদ্ধার বিভ্রান্তিকর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জুলাইযোদ্ধারা প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং বর্তমানে এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *