আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় পার্টি (Jatiya Party)। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক বিশেষ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের (GM Quader)।
তফসিল ঘোষণার ছয় দিন পর আজ সন্ধ্যায় কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শুরু হয়েছে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি। আট বিভাগের জন্য পৃথক বুথে ফরম বিক্রি শুরু হলেও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি। ফরম বিক্রি চলবে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বলে জানিয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া।
দলে ফিরেছে দুই আলোচিত মুখ
দল থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা ফের যোগ দিয়েছেন জাপায়। আজকের সভার মঞ্চেই জি এম কাদেরের পাশে তাঁকে দেখা গেছে।
ফিরেছেন রংপুর-৬ আসনে একসময়কার আলোচিত নেতা নুর মোহাম্মদ মণ্ডলও। ২০০১ সালের নির্বাচনে এই আসনে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে চমক দেখিয়েছিলেন তিনি। পরে তিনি যোগ দেন বিএনপি (BNP) এবং সেখান থেকে আওয়ামী লীগে। আওয়ামী লীগ আমলে তিনি নৌকা প্রতীকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী (Shirin Sharmin Chaudhury)-র ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
জানা গেছে, দলছুট অন্যান্য নেতাদের ফিরিয়ে আনতেও জাপা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
আওয়ামী লীগের ছাড় ও বিরোধী দলের ভূমিকায় জাপা
২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন একতরফা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৩৪টি আসন পেয়ে সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসে জাপা। একই সঙ্গে সরকারেও অংশ নেয় তারা।
২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ ২৬টি আসনে জাপাকে ছাড় দেয়। সেবার ২২টি আসন পেয়ে আবারও বিরোধী দল হয় তারা।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সমানসংখ্যক আসনের ছাড় পায় জাপা। তবে এবার জাপার প্রাপ্ত আসনসংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ১১টি। তৃতীয়বারের মতো বিরোধী দলের অবস্থান ধরে রাখলেও, শক্তি হ্রাস পায় দৃশ্যমানভাবে।
গণ-অভ্যুত্থানের পর চাপের মুখে জাপা
সরকারের সঙ্গে নরম সম্পর্ক ও কখনো কখনো সরকারের সুরে কথা বলায় জাপার বিরুদ্ধে ‘গৃহপালিত বিরোধী’ দলের তকমা বহুদিন ধরেই ছিল। তবে চলতি বছরের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে।
ছাত্র নেতৃত্ব জাপাকে ‘ফ্যা’\সি’\বা’\দে’\র দোসর’ আখ্যা দিলে সরকারের নানা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক থেকে বাদ পড়তে থাকে দলটি। নির্বাচন কমিশন, সংস্কার কমিশনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় ডাক পায়নি জাপা। একইসঙ্গে কাকরাইল কার্যালয়ে একাধিকবার হা’\ম’\লা হয়েছে বলেও অভিযোগ দলটির।
এই জটিল প্রেক্ষাপটে আজকের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আয়োজন করা হয় অনেকটা গোপনে। বেশির ভাগ সদস্যকে না জানিয়েই অনুষ্ঠিত হয় সভাটি।
জাপার মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্দিষ্ট কিছু নেতাকে ডেকে এই বৈঠক হয়। সেখানে মনোনয়ন ফরম বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, “আমরা পরিবেশ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করছি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকলে জাপা অতীতের মতো এবারও নির্বাচনে অংশ নেবে।”


