ময়মনসিংহে নিহত হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির প্রমাণ পায়নি র‌্যাব

ময়মনসিংহের ভালুকায় গণপিটুনিতে নিহত হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির প্রত্যক্ষ কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। ধর্ম অবমাননার বিষয়ে কেউ নিজে শুনেছেন বা দেখেছেন এমন কাউকেও পাওয়া যায়নি বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এ সংস্থা।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে র‌্যাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১৪ এর পরিচালক নাঈমুল হাসান।

এদিকে এ ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের মধ্যে ৭ জনকে র‍্যাব ও ৩ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তাররা হলেন— লিমন সরকার (১৯), তারেক হোসেন (১৯), মানিক মিয়া (২০), এরশাদ আলী (৩৯), নিজুম উদ্দিন (২০), আলমগীর হোসেন (৩৮) এবং মিরাজ হোসেন আকন (৪৬)।

অপরদিকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তাররা হলেন— আজমল হাসান সগীর (২৬), শাহিন মিয়া (১৯) ও নাজমুল।

হত্যার পর গাছের ডালে বেধে লাশে আগুন দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে র‌্যাব-১৪ এর পরিচালক নাঈমুল হাসান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত না করে দিপুকে জনতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

হত্যাকারীরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। বাকি আসামিদেরও দ্রুত গ্রেপ্তারের কথা জানান তিনি।

এদিকে নিহত দিপু চন্দ্র দাসের চাচাতো ভাই কার্তিক চন্দ্র দাস গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ফ্যাক্টরির ভেতরে অনেক ঘটনা ঘটেছে।’ সে কারণেই তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

র‌্যাব জানায়, বিকাল পাঁচটায় ঘটনা শুরু হলেও পুলিশকে কল দেওয়া হয়েছে রাত আটটায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ফ্যাক্টরির ভেতরেই কিছু শ্রমিক দলবদ্ধ হয়ে দিপু চন্দ্র দাসকে প্রথমে মারধর শুরু করেন।

এ সময় তারা দিপুর বিরুদ্ধে ‘মহানবী (সা.)-কে কটূক্তি করার’ অভিযোগ করতে থাকেন। তখন মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে যে ‘দিপু চন্দ্র দাস চায়ের দোকানে বসে এমন মন্তব্য করেছেন’।

একপর্যায়ে খবর ছড়িয়ে পড়লে ফ্যাক্টরির বাইরেও অনেকে জমায়েত হয়ে দিপুকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। আবার ওই সময় ওই এলাকার কারখানাগুলোর ছুটির সময় হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে বহু মানুষ জড়ো হয় সেখানে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে ফ্যাক্টরির প্রডাকশন ম্যানেজার দিপু চন্দ্র দাসকে তখনি বরখাস্ত করে বাইরে ঠেলে দেন বলে জানায় র‌্যাব।

র‍্যাবের এক প্রেস ব্রিফিং দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘অজ্ঞাত উত্তেজিত জনতা দিপু চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে নবী ও ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনে গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক নয়টায় ফ্যাক্টরি থেকে জোরপূর্বক বের করে দাঙ্গা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাতসহ কিলঘুষি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।’

‘পরে মরদেহ জামিরদিয়া স্কয়ার মাস্টারবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের মাঝখানে আইল্যান্ডের গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।’

শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ময়মনসিংহে এক হিন্দু ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে নিন্দা জানাই। নতুন বাংলাদেশে এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই। এই নৃশংস অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *