জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশেই সমাহিত হলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি। গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবি নজরুলের সমাধির পাশেই এই তরুণ বিপ্লবীর দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, যা এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল।
শুক্রবার রাতে এক জরুরি বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হাদিকে কবির পাশে শায়িত করার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয়। জাতীয় কবির সমাধি চত্বরে শহীদ হাদির দাফন শেষে ঢাবি উপাচার্য প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘শরিফ ওসমান হাদি একটি ব্যক্তির নাম নয়, এটি একটি আদর্শের নাম। এই আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়বে এবং কোনো হত্যাকাণ্ড দিয়ে একে থামিয়ে দেওয়া যাবে না। এই হত্যাকাণ্ড কোনো সাধারণ অপরাধ নয়। এটি ন্যায়, স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার পক্ষে দাঁড়ানো একটি কণ্ঠকে স্তব্ধ করার চেষ্টা।
এদিকে শহিদ হাদিকে জাতীয় কবির পাশে কবর দেওয়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নজরুল পরিবারের দুই সদস্য। নজরুলের পরিবারের সদস্য সোনালি কাজী এবং স্বরূপ কাজীর বক্তব্য, যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা অনৈতিক। নিয়ম মতো ওই স্থানে বিশেষ কয়েক জনকে সমাধিস্থ করা হয়। এত জায়গা থাকতে নজরুলের সমাধির পাশে হাদিকে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রাজনীতি রয়েছে। সোনালি বলেন, ‘আমাদের প্রাণেরকবি বাংলাদেশে শেষ জীবন কাটিয়েছেন। এত দিন বাংলাদেশে আমরাও (পরিবারের অন্যেরা) ভাল ছিলাম। কিন্তু এখন যা হচ্ছে…।’ তাঁর সংযোজন, ‘ওই কবরস্থানে সকলকে সমাধিস্থ করা হয় না। কিন্তু ছায়ানট ভাঙচুর করা, রবীন্দনাথের বই পুড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশিদের উগ্রবাদীরা হাদিকে সমাধিস্থ করলেন কবির সমাধির পাশে! এটা হল কেন? নজরুল যেখানে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে গিয়েছেন, জাতের নামে বজ্জাতির কথা বলেছেন, তখন তাঁর সমাধির পাশে এমন এক জনকে সমাধিস্থ করা হল সরকারেরই নির্দেশে!’ তাঁর আশঙ্কা, আগামিদিনে হয়তো কবির সমাধিও ওখানে থাকবে না। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে ভাল মানুষের জায়গা কি হারিয়ে যাচ্ছে? রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে কি পরবর্তী প্রজন্ম অস্বীকার করবে? আমাদের আর্জি, নজরুলকে যেন অসম্মান করা না-হয়। তবে এই সরকারের (বাংলাদেশের অন্তর্বতী সরকার) দায়বদ্ধতা নেই। আমরা ভীষণ মনোকষ্টে রয়েছি। আমরা মর্মাহত।’
কবির পরিবারের আর এক সদস্য স্বরূপ জানান, ১৯৭৬ সালে বিদ্রোহী কবি নজরুলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। সেখানে আততায়ীদের গুলিতে নিহত কট্টরপন্থী নেতাকে কোন যুক্তিকে কবর দেওয়া হয়, তাঁর মাথায় ঢুকছে না।
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হন হাদি। প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি উদ্যোগে হাদিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সিঙ্গাপুরে। গত বৃহস্পতিবার রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় বছর ৩২-এর যুবকের।
সংবাদসূত্র: আনন্দবাজার


