দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হ’\ত্যা’\র হু’\ম’\কি

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে একদল উগ্র হিন্দুত্ববাদীর বিক্ষোভ ও হুমকির ঘটনা ঘটেছে। ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’র ব্যানারে আসা একটি দল সব নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে বাংলাদেশ হাউসের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেয় এবং বাংলাদেশবিরোধী স্লোগানের পাশাপাশি ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হত্যার হুমকি দেয়। ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো ঘটনাটিকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছে।

ঘটনা সম্পর্কে অবগত একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, অন্তত ২০ থেকে ২৫ জনের একটি উগ্রবাদী দল চার থেকে পাঁচটি গাড়িতে করে কূটনৈতিক এলাকা চানক্যপুরীতে প্রবেশ করে বাংলাদেশ হাউসের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তারা উসকানিমূলক স্লোগান দেয় এবং কয়েকজন হাইকমিশনারের উদ্দেশে হুমকিমূলক বক্তব্য দেয় বলে অভিযোগ ওঠে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, ঘটনার সময় বাংলাদেশ হাউসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যদের কার্যকর কোনো হস্তক্ষেপ দেখা যায়নি। হামলাকারীরা বেশ কিছুক্ষণ ধরে স্লোগান দেওয়ার পর কোনো বাধা ছাড়াই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ওই সময় হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশ হাউসেই অবস্থান করছিলেন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছে, উচ্চ নিরাপত্তা-বেষ্টিত কূটনৈতিক এলাকা চানক্যপুরীতে অনুমতি ছাড়া এ ধরনের বিক্ষোভ কীভাবে সম্ভব হলো—তা গুরুতর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সাধারণত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সম্মতি ছাড়া এ এলাকায় কোনো বিক্ষোভ বা সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ হাইকমিশন আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি সম্ভাব্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা চলছে বলে নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে। আলোচনায় দিল্লি ও আগরতলায় ভিসা সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।

উল্লেখ্য, অতীতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উত্তেজনার সময়ে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের চেষ্টা হলেও সেগুলো নিরাপত্তা বাহিনী দূরেই প্রতিহত করেছে। তবে সাম্প্রতিক এই ঘটনাকে সে তুলনায় অনেক বেশি গুরুতর হিসেবে দেখছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এছাড়া গত বছরের অক্টোবরে আগরতলায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলার ঘটনাও দুই দেশের সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়িয়েছিল।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়ার প্রেক্ষাপটে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে এই ঘটনার সময়টি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে; উভয় পক্ষের কূটনীতিকদের পাল্টাপাল্টি তলব এবং সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় দিল্লির এই ঘটনা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *