মঞ্জু-আনিস জোটের প্রার্থীরা ফিরেছেন লাঙ্গলে: জাপার সাবেক চার এমপির ডিগবাজি

একাধিক বিভাজন, নেতৃত্ব সংকট এবং রাজনৈতিক চাপে থাকা সত্ত্বেও জি এম কাদের (GM Quader)–এর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (Jatiya Party – JP) আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৪৩টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। শুক্রবার রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী এই তালিকা প্রকাশ করেন।

চমক সৃষ্টি করে জাপার ঘরে ফিরেছেন চার সাবেক এমপি—লিয়াকত হোসেন খোকা, ফখরুল ইমাম, জিয়াউল হক মৃধা, এবং পনির উদ্দিন আহম্মেদ। এরা কয়েকদিন আগেই জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)–এর প্রার্থী হিসেবে নাম প্রকাশ করেছিলেন। তবে শুক্রবার প্রকাশিত জাপার তালিকাতেও তাঁদের নাম রয়েছে। এনডিএফ নেতারা বলছেন, এ চারজনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন—তারা ফোন ধরছেন না।

জানা গেছে, এই চার এমপি এর আগে এনডিএফের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। জিয়াউল হক মৃধা তো একসময় জাপা থেকে বহিষ্কৃত হয়ে রওশনপন্থি হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর তিনি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের দলে যোগ দেন। কিন্তু এবার বিএনপি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন জমিয়তকে ছেড়ে দেওয়ায় মৃধা জাপায় ফিরে এসেছেন। তাঁর জামাতা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া জানিয়েছেন, মৃধা বৃহস্পতিবারই জাপায় ফিরে গেছেন।

অন্যদিকে, এনডিএফের মুখপাত্র রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “লাঙ্গল পেতে কয়েকজন চলে গেছেন। তবে লাঙ্গল নিয়ে মামলা চলছে, ৮ জানুয়ারি রায় হবে। তখন দেখা যাবে কে কোথায় থাকবেন।”

জাপার মহাসচিব শামীম হায়দার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “জাতীয় পার্টি সবসময় জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আমরা আশঙ্কাজনকভাবে দেখতে পাচ্ছি, সরকার নির্বাচনের সমান সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রয়োজন হলে জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকেও সরে দাঁড়াতে পারে।”

তিনি বলেন, “সারাদেশেই প্রার্থী চাহিদা ছিল। আমরা একাধিক প্রার্থীর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে ২৪৩ জনকে চূড়ান্ত করেছি। প্রার্থী সংকট নয়, বরং সমন্বয়ের চাপ ছিল বেশি।”

একসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গী হয়ে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর থেকে বারবার ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’–এর তকমায় পড়া জাপা এবার ভিন্ন বাস্তবতায়। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্রনেতারা জাপাকে প্রত্যাখ্যান করে। একাধিকবার জাপা কার্যালয়ে হামলা হয়, মামলা হয় জি এম কাদেরসহ সিনিয়র নেতাদের নামে। ফলে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী পেতে হিমশিম খাচ্ছিল দলটি।

এমন বাস্তবতায় পুরনো এমপিদের ‘ডিগবাজি’ ফিরে আসাকে জাপা স্বস্তির নিশ্বাস হিসেবে দেখছে। তবে এনডিএফে যোগ দিয়ে আবার জাপায় ফেরা নেতাদের এই দ্বৈত অবস্থান ভোটের মাঠে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মীর আবদুস সবুর আসুদ, এসএম আব্দুল মান্নান, মিজানুর রহমান, হাজি সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *