জামায়াত জোটে আসন সংকট, অসন্তুষ্ট ইসলামী আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন আজ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে জামায়েতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) নেতৃত্বাধীন ১০-দলীয় জোটে আসন বণ্টনকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় বৈঠক, তীব্র অসন্তোষ ও ভাঙনের ইঙ্গিত দেখা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জোট থেকে বেরিয়ে যেতে পারে ইসলামী আন্দোলন বাঙলাদেশ (Islami Andolon Bangladesh)। আজ দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের অবস্থান স্পষ্ট করবে দলটি।

জানা গেছে, চলতি মাসে আট দলের লিয়াজোঁ কমিটি একাধিক বৈঠক করলেও সন্তোষজনক সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। বিভিন্ন আসনে আংশিক সমঝোতা হলেও, সেই সিদ্ধান্ত অনেক প্রার্থী মানছেন না। বাস্তবে, সব দলের প্রার্থীই সংশ্লিষ্ট আসনগুলোতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন—যা থেকে স্পষ্ট বিরোধের চিত্র।

এই উত্তেজনার মধ্যেই রোববার জামায়াতের জোটে যুক্ত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। নতুন করে আলোচনায় এসেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)–র নামও, যারা ইতোমধ্যেই সমঝোতায় অংশ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের মুখপাত্র মুজিবুর রহমান মঞ্জু।

ভাঙনের সুর স্পষ্ট
জোটের অন্যতম দুই শক্তি জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আসন বণ্টন নিয়ে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ এখন প্রকাশ্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী আন্দোলনের এক নেতা জানান, আট দলের সঙ্গে যে আসনগুলো নিয়ে সমঝোতা হয়েছে, তা দলটিকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ফলে তারা ২৭২ আসনে প্রার্থী দিয়েছেন এবং মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে আলোচনার দরজা এখনো খোলা আছে বলে জানান তিনি।

আজ দুপুর ১২টায় ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম সংবাদ সম্মেলনে দলের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাবেন। এর আগেও দলটি একাধিকবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে, কারণ সমঝোতায় তাদের চাওয়া ছিল ১৫০ আসন, পরে সেটা ১২০ এবং সর্বশেষ ৭৫-এ নামিয়ে আনা হলেও জামায়াত মাত্র ৩৫-৪০ টি আসনে ছাড় দেয়। এই কম প্রাপ্তিতে দলটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অসন্তুষ্ট আরও কয়েকটি দল
শুধু ইসলামী আন্দোলন নয়, অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (Bangladesh Khelafat Majlish)–ও। দলটি চেয়েছিল ৫০টি আসন, কিন্তু পেয়েছে মাত্র ১৩টি। দলের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, “যেসব আসনে সমঝোতা হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবতা মাঠ পর্যায়ে ভিন্ন। তাই যেসব আসনে আমরা প্রার্থী দিয়েছিলাম, তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে সমঝোতা হলে প্রার্থী প্রত্যাহার করা হবে।”

তেমনি, খেলাফত মজলিস চেয়েছিল ৩০টি, পেয়েছে ৩-৫টি; নেজামে ইসলাম ও খেলাফত আন্দোলনকে দেওয়া হয়েছে মাত্র দুটি করে আসন। জাগপা ও বিডিপি পেয়েছে একটি করে আসন। সব মিলিয়ে ঐক্যজোটে নানা দলীয় চাপ এবং সিদ্ধান্তে অসঙ্গতি দিন দিন বাড়ছে।

এনসিপি পেল ২৬টি আসনে ছাড়
এদিকে, জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতায় এনসিপি শুরুতে ৫০টি আসন দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত ৩০ আসনে সমঝোতা হয়, যার মধ্যে ২৬টি নিশ্চিত। এসব আসনে প্রার্থী হচ্ছেন:
– নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), জাভেদ রাসিন (ঢাকা-৯), ইঞ্জিনিয়ার নাবিলা তাহসিন (ঢাকা-২০), দিলশানা পারুল (ঢাকা-১৯), নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী (ঢাকা-৮), সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১), আবদুল আহাদ (দিনাজপুর-৬), আখতার হোসেন (রংপুর-৪), আতিক মুজাহিদ (কুড়িগ্রাম-২), সাইফ মুস্তাফিজ (সিরাজগঞ্জ-৬), আরিফুল দাড়িয়া (গোপালগঞ্জ-৩), আরিফুল ইসলাম আদিব (ঢাকা-১৮), সারোয়ার তুষার (নরসিংদী-২), ডা. মাহমুদা মিতু (ঝালকাঠি-১), মাহবুব আলম (লক্ষ্মীপুর-১), হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), হান্নান মাসুদ (নোয়াখালী-৬), জারজিস কাদের (নাটোর-৩), ডা. জাহেদুল (নেত্রকোনা-১), আশরাফউদ্দিন মাহদি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), আতাউল্লাহ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩), আবদুল্লাহ আল আমিন (নারায়ণগঞ্জ-৪), সুজাউদ্দৌলা (বান্দরবান), সুলতান জাকারিয়া (নোয়াখালী), প্রীতম দাশ (মৌলভীবাজার-৪) এবং জোবায়রুল আরিফ (চট্টগ্রাম-১৩)। আরো চার আসনের জন্য এখনো আলোচনা চলছে।

জামায়াত ও অন্যান্য দল সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য দলগুলির মধ্যে এবি পার্টিকে ৩ টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) ২ টি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে (বিডিপি) ২টি আসনে ছাড় দিতে চায় জামায়াত। তবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সঙ্গে কয়টি আসনে সমঝোতা হচ্ছে, তা এখনো জানা যায়নি।

এবি পার্টির যোগদানে সংখ্যা বেড়ে ১১
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটে এবি পার্টি–র যোগদানের মাধ্যমে সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১-তে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, “গতকাল দুটি দল যুক্ত হওয়ায় ১০-দলীয় জোট হয়। আরও একটি দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”

নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার আগেই এই জোটের ঐক্য, আসন ভাগাভাগি ও নেতৃত্ব নিয়ে চরম জটিলতা তৈরি হয়েছে—যা আগামী দিনগুলোতে জোটের ভবিষ্যত নিয়েই বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *