স্বাধীনতার সূচকে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হওয়া ৪ দেশের একটি বাংলাদেশ

কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা গত বছরে তাদের হাতকে আরও শক্তিশালী করায় বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা চর্চার অধিকার আরও কমেছে। তবে এর মাঝেও কয়েকটি ক্ষেত্রে আশার আলো দেখিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো।

২০২৪ সালে স্বাধীনতার সূচকে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হওয়া চার দেশের মধ্যে তিনটিই দক্ষিণ এশিয়ার। দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কা। অন্য দেশটি হচ্ছে সিরিয়া।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউস-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বুধবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ২০২৫ সালে ১০০-এর মধ্যে ৪৫ স্কোর পেয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় পাঁচ পয়েন্ট বেশি। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪০। তবে ২০২৪ সালে স্কোরের উন্নতি হলেও শ্রেণি পরিবর্তন হয়নি।

স্বাধীনতার সূচক মানে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হওয়া দেশগুলোর তালিকায় নাম থাকলেও বাংলাদেশ এখনো রাজনৈতিক অধিকারচর্চা ও নাগরিক স্বাধীনতার চর্চায় ‘আংশিক স্বাধীন’ দেশ।

ফ্রিডম হাউস প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে স্বাধীনতার সূচকে দুটি দেশ নতুন করে ‘স্বাধীন’ দেশের শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দেশ দুটি হলো সেনেগাল ও ভুটান।

দেশ দুটির উত্তরণের কারণ ব্যাখ্যায় এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনেগালে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ভোট পিছিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিরোধীদের আন্দোলনের মুখে সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং ভোটে বিরোধীরা জয়ী হন।

আর হিমালয় অঞ্চলের ছোট্ট দেশ ভুটান প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সুসংহত করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ভুটানই ‘স্বাধীন’ দেশের শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা প্রসঙ্গে ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রেণিতে অবস্থান পরিবর্তন না হলেও ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের এ দুই দেশের বড় ধরনের উন্নতি লক্ষ করা গেছে।

বাংলাদেশে গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রায় ১৫ বছর বাংলাদেশের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে ছিলেন।

বাংলাদেশ ছাড়াও গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল–আসাদের পতন হয়। ইসলামপন্থি যোদ্ধারা তাকে উৎখাত করেন। তিনিও দেশে ছেড়ে পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন।

ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও সিরিয়া প্রসঙ্গে বলা হয়, যদিও উভয় দেশেই সরকার পতনের পর দ্রুত নাগরিক স্বাধীনতার মান উন্নত হয়েছে। তবে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বে এ উন্নয়ন দেখতে আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

ফ্রিডম হাউসের মতে, এই উন্নতির পেছনে প্রধান কারণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সংসদ নির্বাচনের আগের সময়ের পরিবর্তনগুলো এই অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখেছে।

নতুন নির্বাচনী ব্যবস্থায় কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও অংশগ্রহণমূলক করতে সহায়তা করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা স্বাধীনতা, নির্বাচনী প্রচারের অধিক সুযোগ এবং মতপ্রকাশের অধিকারে সামান্য শিথিলতা এই অগ্রগতির মূল কারণ।

অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসেন প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। অনূঢ়ার জয়ের মধ্য দিয়ে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা দুই দলের আধিপত্যে ভাঙন ধরেছে।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশ ও অঞ্চল মিলিয়ে তালিকায় সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। ৩৮ স্কোর নিয়ে কাশ্মীর এখন ‘আংশিক স্বাধীন’। ২০১৯ সালে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার মুসলিম–অধ্যুষিত ওই অঞ্চলটির বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর গত বছর সেখানে প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে।

তবে ফ্রিডম হাউসের তালিকায় দেশ হিসেবে ভারতের অবনতি হয়েছে। এ জন্য ভারতের বিচার বিভাগে নিয়োগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষণা সংস্থাটি ভারতকে ‘ আংশিক স্বাধীন’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে, স্কোর ৬৩। গত বছর ভারতের স্কোর ছিল ৬৬। ২০২১ সালে ভারত ‘স্বাধীন’ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল।

প্রতিবেদনের সহ–লেখক ইয়ানা গোরোখোভস্কায়া বলেন, বাংলাদেশ ও সিরিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে নাগরিক স্বাধীনতায় উন্নতি হয়েছে। তবে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব অর্জনের জন্য তাদের আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

২০৮টি দেশ ও অঞ্চলের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা চর্চার সুযোগ কতটা আছে, তার ওপর ভিত্তি করে ফ্রিডম হাউস বার্ষিক এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *