অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো দেশের জননিরাপত্তা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam), জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) (NCP) আহ্বায়ক। তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়বে।
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সংশয়
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স (Reuters)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম এই মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারটি বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) প্রকাশিত হয়েছে।
অন্যদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) এর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলতি মাসেই জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “স্বল্পমেয়াদি কিছু সংস্কার কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে, তবে তা আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেনি। বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং পুলিশের ভূমিকা বিবেচনায় নিলে আমি মনে করি না যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।”
প্রথম বড় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সন্দেহ প্রকাশ
সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো নাহিদ ইসলামই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ, যিনি ড. ইউনূসের নির্ধারিত নির্বাচন সময়সীমা নিয়ে প্রকাশ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন শক্তি এনসিপি?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বাধীন যুব দলটি জাতীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র আওয়ামী লীগ (Awami League) এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)-র বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP) দেশের রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রেখেছে। উভয় দলই আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে এবং তাদের যুক্তি হলো, ক্ষমতা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।
নির্বাচনের প্রস্তুতি ও রাজনৈতিক ঐকমত্য
নাহিদ ইসলাম জানান, গত সপ্তাহে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচন আয়োজনের আগে “জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র” নিয়ে রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐকমত্য অর্জন অত্যন্ত জরুরি।
তিনি আরও বলেন, এই ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে এবং গত বছরের রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত এক হাজার মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এটি প্রণয়ন করা হচ্ছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন এই ঘোষণাপত্র প্রস্তুতের কথা জানায়, তখন আন্দোলনরত ছাত্র সংগঠনগুলো সংবিধান পরিবর্তনের দাবি প্রত্যাহার করে নেয়।
নির্বাচন পেছানোর ইঙ্গিত
নাহিদ ইসলাম বলেন, “যদি আমরা এক মাসের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি, তাহলে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। তবে যদি আরও সময় লাগে, তাহলে নির্বাচন স্থগিত করা উচিত।”
এনসিপি প্রধান আরও জানান, বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ধনী ব্যক্তি তার দলকে অর্থায়ন করছে। তারা খুব শিগগিরই একটি নতুন অফিস প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা করছেন।