অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও তরুণ আইনজীবী হাবিবুর রহমান (Habibur Rahman) তার ফেসবুক পোস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফরহাদের দেওয়া এক বিতর্কিত বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ফরহাদ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত জামায়াত (Jamaat) নেতাদের ‘শহিদ’ হিসেবে অভিহিত করে তাদের তুলনা করেছেন ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের শহিদদের সঙ্গে।
ফরহাদের বক্তব্য ও তার বিশ্লেষণ
ফরহাদের দাবি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফাঁসি হওয়া জামায়াত নেতৃবৃন্দ আধিপত্যবাদের শিকার হয়ে ‘শহিদ’ হয়েছেন। তিনি বলেন, আজ যদি কেউ শিবিরের সাবেক কোনো সদস্যকে যুদ্ধাপরাধের সহযোগী বলে, তাহলে ভবিষ্যতে জুলাই আন্দোলনের শহিদদেরও ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আখ্যায়িত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে হাবিবুর রহমান তার পোস্টে এই তুলনাকে ‘ব্লান্ডার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি যুক্তি দেন যে, একাত্তরের গোলাম আযম (Ghulam Azam) ও নিজামী (Nizami) প্রত্যক্ষভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছেন এবং যুদ্ধকালীন সরকারে জামায়াতের মন্ত্রীরা ছিলেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, জামায়াত-শিবির সারাক্ষণ শাহবাগ আন্দোলনকে দোষারোপ করলেও বাস্তবতা হলো, তাদের দলীয় ইতিহাস শাহবাগের চেয়েও নৃশংস।
একাত্তরের প্রেক্ষাপট ও জামায়াতের ভূমিকা
১৯৭১ সালের সংবাদপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, জামায়াত নেতারা মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী জনগণকে ‘হিন্দু বাহিনী’, ‘ভারতীয় ষড়যন্ত্রকারী’ ও ‘মুসলমানদের শত্রু’ বলে আখ্যা দিয়েছিল। এমনকি তারা পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে আল-বদর (Al-Badr) বাহিনী গঠন করে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। ১৭ রমজান, ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের দিনে, তারা এই বাহিনীকে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করে হত্যাযজ্ঞে নামে।
হাবিবুর রহমানের মতে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হলেও তাদের অপরাধের সত্যতা অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি মনে করেন, আধিপত্যবাদের যুক্তি সামনে এনে ফরহাদ এক ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে জুলাই আন্দোলনের শহিদদের তুলনা করেছেন, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
রাজনৈতিক ব্যাখ্যা ও সমাপ্তি
হাবিবুর রহমান স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে তুলনা হতে পারে কেবল সেই সময়ের আওয়ামী লীগ (Awami League) ও ছাত্রলীগ (Chhatra League) নেতাদের সঙ্গে। তবে তিনি এটাও মনে করিয়ে দেন যে, আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই জুলাই আন্দোলনের শহিদদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এসেছে, যেমন একাত্তরে জামায়াত ও ছাত্রসংঘ মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিল।
তিনি আরও বলেন, আধিপত্যবাদের ‘জুজু’ দেখিয়ে মানুষের আবেগকে ব্যবহার করা এক ধরনের কৌশল, যা গোলাম আযম থেকে ফরহাদদের মতো নেতারা যুগে যুগে প্রয়োগ করে আসছেন। কিন্তু জনগণের সমর্থন পেতে হলে ইতিহাস ও বাস্তবতাকে বিকৃত না করাই উত্তম।