ছাত্রশিবির নিয়ে আমার দুটি কথা

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজের একটি পোস্ট ছাত্ররাজনীতিতে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে তার মতামত প্রকাশ করেছেন। তিনি লেখেন,জিয়া হলের ২২৮নং রুমে ওঠার পরে তৎকালীন ছাত্রলীগ কর্তৃক শিবির উপাধি পেয়েছি তিনবার। সিঙ্গেল গেস্টরুমে মেরে তিনবার হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো। ছাত্রলীগের সিনিয়র নামক জানোয়ারদের বলেছিলাম, ভাই আমি শিবির করি না। আমাকে কেন আপনারা বারবার শিবির বলেন? তাদের জবাব ছিলো, নামাজ পড়ি আর একা একা থাকি। বাংলাদেশের যারা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই লেখাটি পড়ছেন তাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি, আবরার ফাহাদকে যেখানে শহীদ করা হয়েছে সেটাই ঢাবিয়ানদের ভাষায় সিঙ্গেল গেস্টরুম। এই সিঙ্গেল গেস্টরুমে আমাকে যেভাবে মারা হয়েছিলো, প্রতিবার সূর্যসেন হলের ওয়াইফাই জোনে বসে আল্লাহর কাছে বলেছি, আল্লাহ! জালিমদের ধ্বংস করো। আর সারারাত কেঁদেছি।
ফার্স্ট ইয়ারে রাজনৈতিক কোনো ক্যাঁচাল বুঝতাম না। তখন ছাত্রদলের অনেকেই ক্লাস-পরীক্ষা করতে পারেনি। ছাত্রদল মিছিল করতো মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাসে, তা-ও ফজরের সময়। তখন ছাত্রদল নাম শুনলে পেটানো হতো এবং ছাত্রদলের সদস্যরাও ছিলো চিহ্নিত। ওরা হলে থাকতো না, বাধ্য হয়ে বাইরে থাকতো। সবচেয়ে ভয়ংকর যে রাজনীতি এখন খেয়াল করছি সেটা কি জানেন? সেটা হলো ভিক্টিম প্রমাণ করার রাজনীতি। ছাত্রশিবিরের এই পলিসি থেকে বের হয়ে আসা উচিত। সে এখনও নিজেকে ভিক্টিম প্রমাণ করতে চায়।
তাদেরকে কেন এই পরামর্শ দিলাম জানেন? কারণ আমার নিজেকেও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে ছাত্রশিবির ট্যাগ খেয়ে। অথচ করোনার সময় আমি আবারও শিবির ট্যাগ খেয়েছিলাম, তা-ও কাদের দ্বারা জানেন? ছাত্রশিবির দ্বারা (প্রমাণ চাইলে দুএকটা শিবিরের লুঙ্গি থাকবে না)। এই যে আমি ট্যাগ খেয়ে নির্যাতিত হলাম এতে কি একটুও শিবিরের দায় নেই? যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা করলাম তখন জানলাম সেখানে ছাত্রলীগের কাতারেও ছিলো শিবিরের নাম। এই সামগ্রিক কার্যক্রম কতটুকু নৈতিক? ছাত্রদলের ওরা যখন এতটা বঞ্চনার শিকার হয়ে এখন ফেসবুকীয় রাজনীতিতে শুধু শিবিরের জয়গান দেখে তখন হয়তো তাদের কষ্ট হয়। বস্তুত, শিবির ট্যাগ খেয়ে যারা নির্যাতিত হয়েছে তাদের প্রায় সবাই (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের) সাধারণ শিক্ষার্থী। এজন্য বলি, আন্দোলন কিংবা সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ সাধারণদের।

Show Comments