দিল্লিতে বক্তব্যে উপেন্দ্র দ্বিবেদীর পর্যবেক্ষণ
ভারতের সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী (Upendra Dwivedi) বলেছেন, চীনের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত শক্তি হিসেবে উত্থান ভারতের জন্য গ্লোবাল সাউথের (তৃতীয় বিশ্ব) নেতৃত্বের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল দিল্লি (Delhi)তে চতুর্থ বিপিন রাওয়াত স্মারক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
আফ্রিকার সম্ভাবনা এবং ভারতের অবস্থান
সেনাপ্রধান দ্বিবেদী বলেন, ভবিষ্যতে আফ্রিকা একটি নতুন ক্ষমতাকেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। ভারতকে এই অঞ্চলের দিকে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবর্তন, সম্পদের নিয়ন্ত্রণ এবং ভূকৌশলগত অবস্থানের কারণে ভারত গুরুত্বপূর্ণ। জনসংখ্যা, বৃহত্তম গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির কারণে ভারতের সুবিধাজনক অবস্থান রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
চীনের উত্থান এবং প্রতিযোগিতা
উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, ‘চীনের একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও কৌশলগত শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ বিশ্বরাজনীতিতে প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছে এবং ভারতের স্বাভাবিক নেতা হওয়ার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।’
ব্রিকস ও এসসিও প্রসঙ্গ
বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, এমনকি ব্রিকস (BRICS) গোষ্ঠীও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। মার্কিন ডলারের আধিপত্য চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে ব্রিকস-এর প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছে। সেই সঙ্গে সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) (Shanghai Cooperation Organization (SCO)) এর কার্যক্রমের ওপর নজর রাখার গুরুত্বও তুলে ধরেন তিনি।
জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কৌশল
দ্বিবেদী বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা কেবল যুদ্ধ পরিচালনার সক্ষমতার বিষয় নয়, বরং যুদ্ধ প্রতিরোধের কৌশল হিসেবেও কাজ করে। তিনি সামরিক ও বেসামরিক খাতের সমন্বয়, আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্প, সঠিক সময়ে তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নেতৃত্ব এবং সাধারণ নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে কার্যকর প্রতিরক্ষা কৌশলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
প্রযুক্তি, তথ্য এবং আধুনিক যুদ্ধ
সেনাপ্রধানের মতে, আধুনিক প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এখন প্রতিরোধের নতুন মুদ্রা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার যুদ্ধ এবং উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিই ভবিষ্যতের যুদ্ধে দেশের মূল শক্তি হবে। তথ্য (ডেটা) এখন বাণিজ্য ও নিরাপত্তার প্রধান মূলধন হয়ে উঠেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গ্লোবাল সাউথে ভারতের ভূমিকা
গ্লোবাল সাউথের অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার আহ্বান জানান সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের মাধ্যমে গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সংঘাত নিরসনে, বিশ্বজুড়ে ভারতীয় প্রবাসীদের মানবিক কাজে যুক্ত করতে এবং বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্ম তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
সন্ত্রাসবাদ, সংঘাত এবং বিশ্ব নিরাপত্তা
তিনি বলেন, পরমাণু অস্ত্রকে কৌশলগত রাজনৈতিক সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করে সম্ভাব্য সংঘাত প্রতিহত করতে হবে। ইউক্রেন ও গাজার সংঘাত থেকে বিশ্ব ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে, তবে উপদ্রুত অঞ্চলগুলোতে ক্ষুদ্র সংঘাত, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা এবং সাইবার হামলার মতো হুমকি বিশ্ব শান্তির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
আংশিক বন্ধুত্ব এবং কূটনৈতিক প্রবণতা
উপেন্দ্র দ্বিবেদী বিশ্ব রাজনীতিতে ‘আংশিক বন্ধুত্ব’ বা ‘ফ্রেন্ডস বাই কমপালসন’-এর নতুন কূটনৈতিক প্রবণতার কথা বলেন। দেশগুলো নিজেদের স্বার্থে বাধ্য হয়ে বন্ধুত্ব বজায় রাখছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তন অনেক সময় দেশের কূটনৈতিক অবস্থান বদলে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং বাংলাদেশ (Bangladesh)এর সাম্প্রতিক ঘটনাবলি তার প্রমাণ।
বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতি
সেনাপ্রধান উল্লেখ করেন, নিরাপত্তা সংকটের ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরাক (Iraq), লিবিয়া (Libya), সিরিয়া (Syria), আফগানিস্তান (Afghanistan)সহ একাধিক দেশের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে পরিবর্তনশীল বালুকাবেলার সঙ্গে তুলনা করেন—যেখানে কখন উচ্চ জোয়ার আর কখন নিম্ন জোয়ার আসবে, তা বলা কঠিন।