সেনাপ্রধানের সঙ্গে হাসানাত-সারজিস’র বৈঠক: বিতর্কিত রাজনীতির নতুন ধারা?

সম্প্রতি সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে হাসনাত (Hasnat), সার্জিস (Sargis)-সহ এনসিপির মোট তিন নেতা বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বৈঠক নিয়ে হাসানাতের পোস্ট’র পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তারা কি নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন? যদি তা-ই হয়, তবে এটি একটি আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক বৈঠক, যেখানে সেনাপ্রধানের দেওয়া যে কোনো বক্তব্য বা মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হওয়া উচিত। আর যদি তা না হয়ে থাকে, যদি তাদের নিজেদের আগ্রহে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেনাপ্রধানের সাথে মিলিত হয়ে থাকেন তাহলে সেই বৈঠকের আলোচনার বিষয় বস্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা কতটুকু সমীচীন তা নিয়েও রয়েছে বিস্তর আলোচনা।

সেনাপ্রধানের বক্তব্য ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

সেনাবাহিনী প্রধান একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেন এবং কোনো একক ব্যক্তির সঙ্গে নয়, বরং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন। বিশেষত, বর্তমান রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে, যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্ত দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, সেখানে সেনাপ্রধানের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ প্রাসঙ্গিক।

যদি সেনাপ্রধান ইনক্লুসিভ নির্বাচনের পক্ষে মতামত দিয়ে থাকেন এবং তা বহুদলীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হয়ে থাকে, তবে সেটি নতুন কোনো বার্তা নয়। অতীতেও তিনি এমন বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু এই বৈঠকের পর এনসিপি (NCP) নেতাদের দেওয়া বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়া এই সংলাপকে বিতর্কিত করেছে।

বিতর্কিত বক্তব্য ও রাজনৈতিক কৌশল

বৈঠকের পর এনসিপির পক্ষ থেকে দলীয় অবস্থান না জানিয়ে বরং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনাপূর্ণ ও উগ্র বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। “জীবনের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে দেব না”—এমন বক্তব্য সরাসরি রাজনৈতিক হিংসার ইঙ্গিত দেয়। এটি কেবল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতমূলক অবস্থান তৈরি করে না, বরং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

এই ধরনের বক্তব্য এবং “কচুক্ষেত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই”-এর ডাক দেওয়া কি সেনাপ্রধানের সঙ্গে রাজনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণার শামিল নয়? এনসিপির এই অবস্থান কি শুধুই তাদের রাজনৈতিক আদর্শের প্রকাশ, নাকি এর মাধ্যমে তারা একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে?

এদিকে সেনাসদর হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টকে “সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়” বলেও মন্তব্য করে এক বিবৃতিতে। এছাড়া ২৭ বছর বয়সী এই ছাত্রনেতার বক্তব্যকে “অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ক গল্পের সম্ভার” হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী।

নিষিদ্ধের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক চর্চা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগ (Awami League) বরাবরই জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে থেকেছে, আর জামায়াত (Jamaat) আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার নীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা দল বিএনপি (BNP) কখনো কারও রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে অবস্থান নেয়নি।

তাহলে, এনসিপি কেন নিষিদ্ধের রাজনীতির এই বয়ানকে গ্রহণ করছে? তারা কি জামায়াতের কৌশল অবলম্বন করছে? হাসনাত (Hasnat) ও সার্জিস (Sargis) কি জামায়াতের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন?

রাজনৈতিক সুস্থতা ও ভবিষ্যতের করণীয়

গণতান্ত্রিক চর্চার মূল ভিত্তি হলো সংলাপ ও সহাবস্থান। কোনো দলের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার আহ্বান কিংবা জীবন দিয়ে প্রতিহত করার হুমকি গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিপন্থী। সভ্য রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে অপরাধীদের বিচারের দাবি তোলা যেতে পারে, তবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিষিদ্ধ করার জন্য হিংসাত্মক বয়ান গ্রহণযোগ্য নয়।

শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) এক দিনে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠেননি, বরং সময়ের পরিক্রমায় রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তাই নতুন রাজনৈতিক শক্তিগুলোর উচিত উগ্রপন্থা থেকে সরে এসে একটি বহুদলীয় ও অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করা।

রাজনীতিতে সভ্যতা বজায় রাখাই হবে টেকসই গণতন্ত্রের চাবিকাঠি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *