ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সহিংসতায় বিপর্যস্ত পুলিশ সদর দপ্তর (Police-Headquarters) নতুন করে যানবাহন সংকট মোকাবিলায় ১৫০ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন পেয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, একটি সিন্ডিকেট ভারত থেকে গাড়ি কেনার তৎপরতায় জড়িত।
আন্দোলনের সহিংসতায় বিপর্যস্ত পুলিশের অবকাঠামো
গত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সহিংস হামলায় পুলিশ সদর দপ্তর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬০৭ কোটি ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৯৭৫ টাকার বেশি সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২৭১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার যানবাহন, ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকার মোটরসাইকেল, ২১৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার স্থাপনা, ১২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম এবং প্রায় ১০৫ কোটি টাকার পোশাক ও অন্যান্য সরঞ্জাম।
আন্দোলনের সময় ৫৮টি থানায় আগুন দেওয়া হয় এবং ৫৬টি থানায় ভাঙচুর চালানো হয়। এছাড়া ২৬টি ফাঁড়িতে আগুন এবং ২৪টি ফাঁড়ি, ১২টি তদন্ত কেন্দ্র, ১০৬টি পুলিশ বক্স, ২৯টি অফিস ও ১৫টি পুলিশ লাইনসে হামলা হয়। এ সময় ৩০০টি যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং ৫৪৮টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। ১৫৬টি মোটরসাইকেল আগুনে ভস্মীভূত হয় এবং ৭৩টি ভাঙচুর করা হয়।
যানবাহন সংকট কাটাতে বাজেট অনুমোদন
এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Ministry-of-Home-Affairs) পুলিশের যানবাহন সংকট নিরসনে ১৫০ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ সদর দপ্তর ২৭৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করলেও মন্ত্রণালয় সেটি কমিয়ে দেয়। অনুমোদিত বাজেটে আপাতত ৪৩১টি যানবাহন কেনা হবে।
প্রস্তাবিত যানবাহনের মধ্যে রয়েছে—
– ৩০টি জিপ
– ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ
– ১০০টি সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ
– ৮টি মাইক্রোবাস
– ১৬টি ট্রাক
– ৪টি বাস
– ১৫২টি মোটরসাইকেল
– ৮টি রেকার
– ৪টি এপিসি
– ১টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডগভ্যান
মন্ত্রণালয় দামি গাড়ি কেনা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে এবং স্থানীয় বাজার থেকে ক্রয় করতে বলা হয়েছে।
ভারতীয় গাড়ি কেনার সিন্ডিকেট নিয়ে অভিযোগ
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ সদর দপ্তরে একটি সিন্ডিকেট ভারত থেকে গাড়ি কিনতে তৎপর। দেশের বিভিন্ন মোটরসাইকেল কোম্পানি দাবি করেছে, তারা আন্তর্জাতিক মানের মোটরসাইকেল তৈরি করলেও পুলিশ ভারতীয় পণ্য আমদানিতে আগ্রহী। পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ (Awami-League) সরকারের আমলে দেশীয় যানবাহন কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও এই সিন্ডিকেটের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সিন্ডিকেট ভাঙার নির্দেশ দিয়েছে এবং ভারতীয় গাড়ি আমদানি থেকে সরে এসে দেশীয় কোম্পানি থেকে গাড়ি কেনার নির্দেশনা দিয়েছে।
যানবাহনের দাম ও ক্রয় পদ্ধতি
পুলিশ সদর দপ্তরের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিটি জিপের দাম ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, ডাবল কেবিন পিকআপ ৮০ লাখ, সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ ৬৫ লাখ, প্যাট্রলকার ৪৮ লাখ, মাইক্রোবাস ৬০ লাখ, মোটরসাইকেল ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১০ টনের রেকার ২ কোটি, এপিসি ৬ কোটি এবং ডগভ্যানের দাম ৭৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে মন্ত্রণালয় খরচ কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে এপিসি ও রেকার কেনার কথা বলা হয়েছে। বাকি যানবাহন কেনা হবে স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে।