সংসদের উচ্চ কক্ষে প্রতিনিধিত্ব নিয়ে বিএনপির সুপারিশের সমালোচনায় ফাহাম আব্দুস সালাম

সংসদের উচ্চ কক্ষ গঠনের প্রস্তাব নিয়ে বিএনপি‘র সুপারিশের বিরোধিতা করেছেন ফাহাম আব্দুস সালাম। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, বিএনপির দেওয়া প্রস্তাব সমর্থনযোগ্য নয় এবং উচ্চ কক্ষে প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে দলগুলোর মোট জাতীয় ভোটের ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ করা উচিত।

উচ্চ কক্ষ নিয়ে ফাহাম আব্দুস সালামের মতামত

ফাহাম আব্দুস সালাম মনে করেন, সংসদের উচ্চ কক্ষে প্রতিনিধিত্ব নিম্ন কক্ষের আসনের ভিত্তিতে নয়, বরং জাতীয় নির্বাচনে দলগুলোর মোট ভোটের অনুপাতে নির্ধারিত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, “আদর্শগতভাবে কমিটির প্রস্তাবনাই সঠিক, তবে অবশ্যই একটা কাট-অফ থাকতে হবে। সারা দেশে যারা মোট ভোটের ৮% এর নিচে ভোট পাবে, তারা উচ্চ কক্ষে কোনো প্রতিনিধিত্ব পাবে না।”

তিনি ব্যাখ্যা করেন, বেশি সংখ্যক ছোট দলের উচ্চ কক্ষে প্রবেশ গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ এতে অনেক দল নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়াকে অকার্যকর করে তুলতে পারে। তার মতে, সংসদীয় গণতন্ত্রে দুই থেকে চারটি দলের শক্তিশালী উপস্থিতি থাকা উচিত।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “অনেক দেশে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু দল শুধুমাত্র একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করে এবং স্থানীয়ভাবে ভালো করলেও জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায় না।” যেমন, তিনি কটাক্ষ করে উল্লেখ করেন, “নওগাঁ গাঁজা পার্টি, নারায়ণগঞ্জ সেক্স পার্টি বা নোয়াখালী নন-রেইনবো পার্টির মতো দল যদি তাদের নিজ এলাকায় ভালো করেও, তাদের উচ্চ কক্ষে থাকার যৌক্তিকতা নেই। কারণ তাদের রাজনীতি জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়।”

সরাসরি ভোট নাকি দলীয় ভোট?

বিএনপির প্রস্তাব অনুযায়ী নিম্ন কক্ষের আসন সংখ্যার ভিত্তিতে উচ্চ কক্ষে আসন বণ্টন করা হলে তা অর্থহীন হয়ে যাবে বলে মনে করেন ফাহাম আব্দুস সালাম। তবে তিনি সরাসরি ভোটের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন, যদি উচ্চ কক্ষে সরাসরি ভোট হয়, তাহলে বিএনপি-জামাত আরও বেশি আসন পেতে পারে। কারণ তারা এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবে যারা জেতার সম্ভাবনা বেশি রাখে।

তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, “নিম্ন কক্ষে যারা পপুলার ভোটে নির্বাচিত হন, তারা অনেক সময় আইন প্রণয়ন বা নীতি নির্ধারণ বোঝেন না। ফলে তারা উচ্চ কক্ষে গেলে আইন প্রণয়নের গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”

ফাহাম আব্দুস সালাম বলেন, “উচ্চ কক্ষের উদ্দেশ্যই হচ্ছে যোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা, যাতে তারা নীতি নির্ধারণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।” যদি সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে উচ্চ কক্ষ একটি ক্ষুদ্র নিম্ন কক্ষে পরিণত হবে, যা তার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত করবে।

সংবিধান ও নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক দলগুলোর অংশগ্রহণ অনুচিত

ফাহাম আব্দুস সালাম বলেন, “আমি এমন কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব উচ্চ কক্ষে চাই না যারা রাষ্ট্রের আইন বা অর্থনীতি সম্পর্কে প্রচলিত সংবিধান থেকে মৌলিকভাবে ভিন্ন মত পোষণ করে।”

তিনি উদাহরণ দেন, “যদি কোনো ইসলামপন্থী দল মনে করে আমাদের বিচার ব্যবস্থা ইনকুইজিটরি হতে হবে (বর্তমান এডভারসারিয়াল সিস্টেমের বিপরীতে), অথবা কোনো বামপন্থী দল মনে করে যে আমাদের অর্থনীতি কমান্ড ইকোনমি হওয়া উচিত— তাহলে তাদের উচ্চ কক্ষে অংশগ্রহণ গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের শহুরে সেকুলার বামপন্থী দলগুলো (যেমন সিপিবি) সবসময় মিডিয়ায় অপ্রত্যাশিতভাবে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু তাদের উচ্চ কক্ষে থাকার প্রয়োজন নেই।

উচ্চ কক্ষের প্রতিনিধিত্ব কেমন হওয়া উচিত?

ফাহাম আব্দুস সালাম মনে করেন, ৩ থেকে ৪টি বড় দলের প্রতিনিধিত্বই উচ্চ কক্ষে থাকা উচিত। কারণ এতে গণতন্ত্র কার্যকর থাকবে এবং নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া শক্তিশালী হবে।

তিনি বলেন, “আমাদের এমন একটি নীতি গ্রহণ করা উচিত যাতে শুধুমাত্র তিন বা চারটি দলের প্রতিনিধিত্ব উচ্চ কক্ষে থাকে।”

উচ্চ কক্ষ প্রসঙ্গে বিএনপির সুপারিশকে ‘অযৌক্তিক’ বললেন ফাহাম

ফাহাম আব্দুস সালামের মতে, বিএনপি‘র সুপারিশ অযৌক্তিক ও গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেন, “আমাদের উচিত সুনির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করা, যাতে উচ্চ কক্ষে কেবলমাত্র কার্যকর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব থাকে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *