নরসিংদী (Narsingdi) সদর উপজেলার মাধবদী (Madhabdi) পৌর এলাকায় ঈদের আগে চাঁদা (এয়ানত) না দেওয়ায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের (Islami Chhatra Shibir) কর্মীদের হাতে এক ব্যাংক কর্মকর্তা মারধরের শিকার হয়েছেন। সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে ইসলামী ব্যাংক (Islami Bank) মাধবদী শাখার পাশে একটি গলিতে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। আহত কর্মকর্তা মো. সেলিম মিয়া বর্তমানে নরসিংদী সদর হাসপাতাল (Narsingdi Sadar Hospital)-এ চিকিৎসাধীন।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের হুমকি থেকে শুরু হয় সংঘাত
ভুক্তভোগী ব্যাংক কর্মকর্তা মো. সেলিম মিয়া (৪৩) ইসলামী ব্যাংকে ১৬ বছর ধরে চাকরি করছেন এবং মাধবদী শাখায় বিনিয়োগ বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত। ২৭ মার্চ সকালেই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে, যখন ছাত্রশিবিরের ৯-১০ জন সদস্য ব্যাংকে এসে জোরপূর্বক চাঁদা তুলতে থাকে। ভিড়ের মধ্যে তাদের এমন আচরণে সেলিম মিয়া তাঁদের নির্দিষ্ট স্থানে বসে চাঁদা নিতে বললে শিবির সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন।
শিবিরের পরিকল্পিত প্রতিশোধ: অফিসে হুমকি, পরে রাস্তায় হামলা
ওইদিন বিকেলেই আমিনুল ইসলাম (Aminul Islam)-এর নেতৃত্বে শিবির কর্মীরা আবার ব্যাংকে এসে ব্যবস্থাপক আবু সাঈদের কক্ষে সেলিম মিয়াকে ডেকে পাঠান। সেখানে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই তাঁকে ধমকানো হয় এবং হাত-পা কেটে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। কর্মকর্তাদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও শিবির সদস্যরা ব্যাপকভাবে উত্তেজিত ছিলেন।
সেলিম মিয়া বলেন, “আজকের হামলা ছিল সেই হুমকিরই বাস্তবায়ন।” সোমবার সকালে ১০-১২ জন শিবির কর্মী তাঁর পথরোধ করে জোরপূর্বক পাশের গলিতে নিয়ে গিয়ে কিলঘুষি, লাথি ও লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে মারধর করে। পথচারীরা দূরে দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে চিৎকার শুনে সহকর্মীরা এসে তাঁকে উদ্ধার করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে, নিরাপত্তাহীনতায় ব্যাংক কর্মকর্তারা
সেলিম মিয়াকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বর্তমানে তিনি নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসক ফাতিমা আক্তার জানিয়েছেন, শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত রয়েছে এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
শাখা ব্যবস্থাপক আবু সাঈদ বলেন, “শিবিরের কর্মীরা চাঁদা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সম্প্রতি তিনজন জামায়াত নেতাসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির মামলা করায় তারা আরও অসন্তুষ্ট ছিল। বিষয়টি হেড অফিস ও জামায়াত নেতাদের জানানো হলেও এমন ভয়ানক হামলার ঘটনা ঘটেছে।”
জামায়াতের বক্তব্য ও পুলিশের পদক্ষেপ
মাধবদী পৌর জামায়াতের আমির আমিনুল ইসলাম এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে মাধবদী থানা জামায়াতের আমির জাফরুল্লাহ খান (Zafrullah Khan) বলেন, “গাজার ঘটনায় ব্যস্ত থাকায় আমরা বিষয়টি জানতাম না। শুনেই ব্যাংকে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি, আমরা বিষয়টির সমাধান করব।”
মাধবদী থানার (Madhabdi Thana) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
চাঁদাবাজি ও সহিংসতায় জড়িত ছাত্রশিবির: নতুন করে আতঙ্ক
এই হামলার ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনৈতিক প্রভাব ও সহিংস চাঁদাবাজি। ব্যাংক কর্মকর্তাদের অভিযোগ, শিবির কর্মীরা প্রায় নিয়মিতভাবেই ব্যাংকে এসে চাঁদা দাবি করে থাকে। এবার তা গড়ালো সরাসরি সহিংসতায়।