‘সংস্কার’ শব্দটি একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে: ব্যারিস্টার মঈন ফিরোজীর মন্তব্য

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করেছেন বর্তমান অন্তবর্তীকালিন সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মঈন ফিরোজী (Moin Firozi)। তৃতীয় মাত্রায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে যে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে, তাদের কোনো রাজনৈতিক ভিত্তি নেই, যা একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া গঠনে বড় বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতি ও ঘোলাটে পরিস্থিতি

ব্যারিস্টার মঈন ফিরোজী বলেন, সাধারণত একটি সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে এবং সেই দলের পিছনে থাকে বিশাল জনগণের সমর্থন। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যমান সরকারের মধ্যে এমন কোনো রাজনৈতিক কাঠামো নেই। এটি এক ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপ হলেও সংবিধান অনুযায়ী তিন মাসের নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার যে দায়িত্ব ছিল, তা এখন অনির্দিষ্ট সময়ে গড়িয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “এই সরকারের মূল দায়িত্ব ছিল একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে একটি রাজনৈতিক সরকারের প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সংস্কার শব্দটি আসার পর পুরো সরকারের কার্যক্রম যেন অন্যধারায় চলে গেছে।”

সংস্কার শব্দের ব্যবহার ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন

ব্যারিস্টার ফিরোজী অভিযোগ করেন, ‘সংস্কার’ শব্দটি একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি বলেন, “কমিশনগুলো যেভাবে কাজ করেছে এবং যে প্রত্যাশা ছিল, তা এখন মনে হচ্ছে শুধুই একটা গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।”

তিনি মনে করেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে বিষয়গুলো নির্ধারণ করা একটি স্বাভাবিক বিষয়। এজন্য বড় গবেষণা বা বছরের পর বছর সময় লাগার কথা না। কনসেন্সাস কমিশন একটি ছক তৈরি করেছে, রাজনৈতিক দলগুলোকেও তাদের মতামত জানানো হয়েছে। এসবের ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে অল্প সময়েই একটি রূপরেখা তৈরি করা সম্ভব।

সরকারের গঠনতন্ত্র ও ভূমিকা নিয়ে ধোঁয়াশা

বর্তমান সরকারের কাঠামো স্পষ্ট নয় উল্লেখ করে ব্যারিস্টার ফিরোজী বলেন, “সরকার কাকে বোঝায়—চিফ অ্যাডভাইজার একাই সরকার কিনা, না কি সরকারের সঙ্গে প্যারালালভাবে সেনাবাহিনী বা মিডিয়া প্রেসার গ্রুপগুলোও কাজ করছে—এটা এখন পরিষ্কার না।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রধান উপদেষ্টা (Chief Adviser) একটি স্পষ্ট ভাষণে পুরো প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করবেন এবং জনগণকে জানাবেন সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে দৃশ্যমান করা গেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অনেকটাই উন্নতি পাবে।”

বিএনপির ভূমিকা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব

বিএনপি (BNP) প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার ফিরোজী বলেন, দলটি প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং কনসেন্সাস কমিশনে প্রায় ৬২টি সুপারিশ লিখিত আকারে জমা দিয়েছে। তিনি বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “তারা চাইলে বলতেই পারত যে সরকার গঠনের পর আমরা সংস্কার করব। কিন্তু তারা তা না করে, কনসেন্সাস কমিশনের সাথেই সহযোগিতা করেছে।”

পরবর্তী পদক্ষেপ ও সুপারিশ

তিনি মনে করেন, যেহেতু ডিসেম্বর বেশি দূরে নয় এবং সংস্কার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয়তা বাড়ছে, তাই এখনই নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে প্রক্রিয়াটি শুরু করা উচিত।

তিনি বলেন, “একবার প্রক্রিয়াটি শুরু হয়ে গেলে, আর কেউ রাজনৈতিকভাবে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ পাবে না। তখন ফোকাস থাকবে নির্বাচনেই।”

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমনিতেই ভালো থাকে, কারণ সবাই চায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। এখন দরকার সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিক যে তারা কবে নির্বাচন দেবে এবং কীভাবে তা সম্পন্ন করবে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *