বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে পাঠাতে ভারতের স্থলবন্দর ব্যবহার করার সুবিধা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে মুখ খুলেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Indian Ministry of External Affairs)। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল জানিয়েছেন, প্রতিবেশী একটি দেশের কিছু ‘ঘটনা’র কারণে ভারত এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে তিনি নির্দিষ্টভাবে কী ধরনের ঘটনা সেই সম্পর্কে কিছু জানাননি।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রণধীর বলেন, “এই সিদ্ধান্তের আগে কী কী ঘটনা ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখলে পুরো চিত্র পরিষ্কার হয়ে যাবে।” তিনি আরও যোগ করেন, এই ট্রান্সশিপমেন্ট নিষেধাজ্ঞা নেপাল বা ভুটানের মতো অন্য প্রতিবেশী স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্রগুলোর ওপর প্রযোজ্য নয়। সেসব দেশে বাংলাদেশের পণ্য চলাচল স্বাভাবিকভাবেই অব্যাহত থাকবে।
এদিকে ভারতীয় সরকারি সূত্র বলছে, এই কূটনৈতিক টানাপড়েনের সূচনা হয়েছিল গত মার্চে, যখন বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারতের স্থলবন্দর ব্যবহার করে সুতা আমদানি বন্ধের সুপারিশ করে। সেই সময় এ সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে অবকাঠামোগত সমস্যার কথা বলা হয়। কিন্তু এরপরই ভারত তার স্থলবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে রপ্তানির সুবিধা বাতিল করে দেয়। এর কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ নিজের সুতা আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে।
সূত্রমতে, বাংলাদেশের ওই সিদ্ধান্তের পেছনে পাকিস্তান থেকে সুতা আমদানি সহজ করা ছিল মূল উদ্দেশ্য। সমুদ্রপথে পাকিস্তানি সুতা আনতে সুবিধা হয় এমন নীতিই গ্রহণ করে ঢাকা। ফলে অনেকের চোখে এটি ছিল ভারতের বাণিজ্যিক স্বার্থে আঘাত এবং আঞ্চলিক কৌশলে নতুন সমীকরণ।
এ বিষয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে মুখপাত্র জয়সোয়াল বলেন, “ভারত চায় বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় থাকুক। আমরা একটি গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ দেখতে আগ্রহী।”
এই টানাপড়েনের পটভূমিতে আরও একটি কূটনৈতিক ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব। এই বৈঠক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়ার অংশ। চলতি মাসেই ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে।” এর বাইরে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
সব মিলিয়ে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ময়দানে সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপগুলো এক নতুন গতিপথ তৈরি করছে। প্রতিবেশী সম্পর্কের ওপর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকলেও, আপাতত ভারত এবং বাংলাদেশ নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।