শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনীয়া ইউনিয়ন শাখা ছাত্রদল (Chhatra Dal)-এর সিনিয়র সহসভাপতি মো. আব্দুল মুন্নাফ আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলামীতে (Jamaat-e-Islami) যোগ দিয়েছেন। শুক্রবার রাতে বাহার বাজারে পৌর জামায়াতের আয়োজিত এক সাধারণ সভায় তিনি শেরপুর জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাফিজুর রহমানের হাতে জামায়াতের সদস্য ফরম পূরণ করে যোগদান করেন।
মুন্নাফের এই দলবদলের ঘটনাটি রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। কারণ, অতীতে বিএনপি ও ছাত্রদলের সঙ্গে দীর্ঘদিন সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকা একজন নেতা হঠাৎ আদর্শের টানে জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি দলকে বেছে নেওয়ায় অনেকেই এর নেপথ্য কারণ খুঁজতে শুরু করেছেন।
সভায় জামায়াতে যোগদানের মুহূর্তে তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন শেরপুর জেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ, শ্রীবরদী উপজেলা এবং পৌর পর্যায়ের নেতারাও।
ছাত্রদল থেকে সরে আসার পেছনে নিজের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আব্দুল মুন্নাফ বলেন, “দীর্ঘদিন ছাত্রদলের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। কিন্তু সময়ের সাথে আমি উপলব্ধি করেছি যে জামায়াতের নীতি ও আদর্শ আমার হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেছে।”
তিনি আরও জানান, “আমার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার পরিবর্তনের পেছনে মূলত ইসলামী জীবনাদর্শের প্রতি আকর্ষণ কাজ করেছে। আমি মনে করি, একজন মুসলমানের জন্য রাসূল (সা.) এর আদর্শ অনুসরণ করাটাই সর্বোত্তম পথ।”
পদত্যাগপত্রেও এই মনোভাব স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে তিনি লেখেন, “আমি দীর্ঘদিন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে আমার কাছে রাসূল (সা.) এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করাটাই উত্তম বলে মনে হয়েছে। তাই আমি সজ্ঞানে এবং স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি।”
এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি ও ছাত্রদলের মধ্য থেকে জামায়াতে যোগদানের এমন প্রবণতা নতুন নয়। বিশেষ করে জামায়াত ও তাদের ছাত্রসংগঠন শিবিরের মধ্যে এমন একটি চর্চা বহু আগে থেকেই দেখা গেছে—নিজ পরিচয় আড়াল করে ভিন্ন রাজনৈতিক ব্যানারে কাজ করে যাওয়ার। রাজনৈতিক মহলে তাই অনেকেই জামায়াত-শিবিরকে ‘গুপ্ত সংগঠন’ হিসেবেও তির্যকভাবে অভিহিত করেন। ফলে যখন রাজনৈতিক আবহ বদলায়, তখন এমন একজন দুজন ‘ঘাপটি মেরে বসে থাকা’ কর্মী নতুন করে পুরনো ঘরেই ফিরে যান—এমনটা অসম্ভব কিছু নয়।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শেরপুর জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ মাওলানা আব্দুর রহমান, শ্রীবরদী উপজেলা আমির আজহারুল ইসলাম মিস্টার, উপজেলা যুব বিভাগের সভাপতি আমির হামজা মিস্টার, সেক্রেটারি জাকির হোসেন, পৌর জামায়াতের আমির মাওলানা তাহেরুল ইসলাম, সেক্রেটারি মুফতি মোশারফ হোসেন, পৌর যুব বিভাগের সভাপতি শাহজাহান কবির ও সেক্রেটারি মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।