নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে থানা ঘেরাও করে স্থানীয় ছাত্রলীগ-আওয়ামীলীদের নেতা-কর্মীরা। এসময় তাদের সাথে ছিলেন আটক সাগরের স্বজন ও প্রতিবেশীরা। এখবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নারীকর্মীরা ঘেরাওয়ে অংশ নেয়া লোকজনের উপর হামলা করে বলে জানা গেছে।
আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে আড়াইহাজার থানার চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তার হওয়া সাগর হাসান মাহমুদপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং আড়াইহাজার সরকারি সফর আলী কলেজের ছাত্র। রোববার রাতে কল্যান্দী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
থানার সামনে জড়ো হওয়া সাগরের স্বজন ও প্রতিবেশী নারীরা তাকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে বিক্ষোভে অংশ নেন। তাঁরা জানতে চেয়েছিলেন, ঠিক কোন মামলায় সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে থানা গেট বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, এ সময় স্থানীয় বিএনপি, মহিলা দল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নারীকর্মী এসে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা সাগরের এক নারী আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জানতে চেয়েছিলাম সাগরের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আছে। কিন্তু পুলিশ কিছুই বললো না, বরং ওসি নিজেই বিএনপির লোকজনকে ডেকে এনে আমাদের উপর হামলা করিয়েছে।”
তবে আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনায়েত হোসেন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “পুলিশ কোনো হামলা ঘটায়নি। সাগরের আত্মীয়রা উত্তেজিত হয়ে ওঠায় আমরা থানার গেট বন্ধ করে দেয়। পরে কিছু বিএনপি ও ছাত্রদলের নারীকর্মী এসে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করে।”
তিনি আরও জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে সাগরের মাকে হেফাজতে নেওয়া হয় এবং অন্যদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
বিএনপির বিরুদ্ধে ওঠা হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইউসুফ আলী জানান, “মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। এমন কিছু হলে আমি অবশ্যই জানতাম। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। সত্যি এমন কিছু হয়ে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশ জানায়, সাগরের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে এবং একটি ঋণখেলাপির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। দুপুরে তাঁকে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে—পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।