‘মিডিয়া ট্রায়াল ও প্রোপাগান্ডার শিকার’: পদচ্যুত ছাত্র প্রতিনিধি তুহিন ফারাবীর অভিযোগ

ছাত্র উপদেষ্টা ও ছাত্র প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির অভিযোগ ও তাদের পদচ্যুতি নিয়ে মুখ খুলেছেন স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় ছাত্র কমিটির সদ্য বরখাস্ত হওয়া সদস্য মুহাম্মদ তুহিন ফারাবী। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) নিজের ফেসবুক পোস্টে তুহিন দাবি করেন, এটি একটি ‘সুপরিকল্পিত চক্রান্ত’, যার উদ্দেশ্য ছাত্র প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে জনমনে আস্থা নষ্ট করা।

তুহিন ফারাবীর অভিযোগ, “জনগণের ওপর থেকে ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রতিনিধিদের আস্থা নষ্ট করতেই একটি চক্র আমাদেরকে মিডিয়া ট্রায়াল ও হিংসাত্মক প্রোপাগান্ডার মুখোমুখি করছে। ছাত্রদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে নেতৃত্ব দুর্বল করার অপচেষ্টা চলছে।”

তিনি আরও দাবি করেন, “গত কয়েক মাসে কিছু স্বার্থান্বেষী নেতা আমাদের কাছে কিছু অযৌক্তিক শর্ত রেখেছিলেন। আমরা যদি সেই শর্তে রাজি হতাম, তাহলে আজ এই প্রপাগান্ডার শিকার হতাম না।”

তুহিন বলেন, প্রাথমিকভাবে তাকে ও তার সহকর্মীদের জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট হিসেবে চিহ্নিত করে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল। “এসব ভিত্তিহীন অপপ্রচারের পেছনে কারা, আমি প্রয়োজনে সব তথ্য প্রকাশ করব ইনশাআল্লাহ,”—উল্লেখ করেন তিনি।

সবচেয়ে বিস্ময়কর দাবি তুহিনের—“যদি এই প্রপাগান্ডার সামান্যতম সত্যতা থাকে, আমি চাই আমাকে বাইতুল মোকাররম মসজিদের সামনে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হোক।”

তিনি দেশের সৎ ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “৫ আগস্টের পর আমার কোনো সম্পদ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে কি না, দুর্নীতি দমন কমিশন (ACC) এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেন তা তদন্ত করে দেখে।”

তবে তুহিনের এই আত্মপক্ষ সমর্থনের মাঝেই রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। সরকারি আদেশ অনুযায়ী, ২১ এপ্রিল তুহিন ফারাবী এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মোয়াজ্জেম হোসেনকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

অভিযোগ অনুযায়ী, তারা তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল, পরিচালক, সিভিল সার্জনসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ-বদলিতে আদায় করতেন ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এছাড়া সিনিয়র স্টাফ নার্স ও মিডওয়াইফদের বদলিতে দুই লাখ টাকা, হজ টিমে ডাক্তার-নার্সদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্যও নেওয়া হতো মোটা অঙ্কের ঘুষ।

একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সিনিয়র সচিব হওয়ার পর, তার ছত্রছায়ায় বিপুলসংখ্যক চিকিৎসক, কর্মকর্তা বদলি করেন তুহিন ও তার সহযোগী ডা. মাহমুদুল হাসান। বদলি প্রতিটিতে নাকি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। এমনকি ৫ আগস্টের পর পালিয়ে যাওয়া ঠিকাদারদের স্থলে নতুনদের নিয়োগেও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।

এই পরিস্থিতিতে, তুহিনের ফেসবুক পোস্টটি শুধু আত্মপক্ষ সমর্থন নয়—প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একপ্রকার পাল্টা যুদ্ধ ঘোষণা বলেই মনে করছেন অনেকেই। এখন দেখার বিষয়, তদন্ত সংস্থাগুলো কীভাবে এ বিষয়ে এগোয়, আর তুহিন ফারাবীর দাবি কতটা সত্যতা পায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *