পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫ ঘিরে প্রকাশিত পদক তালিকা ঘিরে পুলিশের ভেতরে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। পুরস্কৃতদের মধ্যে রয়েছেন বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল হক ডাবলু (Monirul Haque Dabloo), যার আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক পরিচয় ইতিপূর্বেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অথচ, সাহসিকতা এবং নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করা পুলিশ কর্মকর্তা বশির উদ্দিন (Bashir Uddin), অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামান (Moniruzzaman) এবং বিপ্লবী ডিআইজি ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমান (Barrister Zillur Rahman) পদকের জন্য বিবেচিতই হননি।
অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরও পুলিশের পুরনো দলদাস চরিত্র বদলায়নি। বরং নির্বাচন কেন্দ্র দখলে সহায়তাকারী এবং লবিংয়ে পারদর্শী কর্মকর্তাদেরই পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। তালিকাভুক্তদের আজ সকাল ১০টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। আগামী ২৯ এপ্রিল শুরু হচ্ছে তিনদিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ, যেখানে পদক পরিয়ে দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তালিকার ৩৮তম স্থানে রয়েছেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মনিরুল হক ডাবলু। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুর ঘনিষ্ঠ হিসেবেই তার পেশাগত অগ্রগতি হয়েছে। এক ডিও লেটারে উল্লেখ করা হয়, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এবং শেখ হাসিনার ‘নির্ভীক কর্মী’ হিসেবেই পরিচিত।
ডিএমপির নিউ মার্কেট থানায় দায়িত্ব পালনের সময় ডিও লেটার ব্যবহার করে ওসির পদ পেয়েছিলেন ডাবলু। এরপর আশুলিয়া থানায় বদলি হলেও দলীয় পরিচয় ভাইরাল হওয়ায় তাকে ক্লোজ করা হয়। পরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ফের ওসি পদে নিয়োগ পান তিনি।
অন্যদিকে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বশির উদ্দিনের গল্পটা একেবারে বিপরীত। ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টা রুখে দেন তিনি। এমপি শামীম ওসমানের চাপের মুখেও নতিস্বীকার করেননি। সেই সাহসিকতার জন্য তার নাম থাকা উচিত ছিল পদকের শীর্ষে, দাবি করেন অনেকেই।
বশির উদ্দিন বলেন, “আমি কখনো অন্যায়ের সাথে আপস করিনি। ভিআইপি গাড়ি ডাম্পিং করেও শাস্তি পেয়েছি। পদক আমার লক্ষ্য ছিল না।”
একইভাবে, অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামান এবং ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমানও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মাশুল দিয়েছেন। মনিরুজ্জামান বলেন, “আমি পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়েছি, কারণ জনগণের ঘৃণার পাত্র হয়ে থাকতে চাইনি।” সরকার এখনও তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি।
পদকের জন্য যাদের চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তালিকায় আছেন সাবেক আইজিপি ময়নুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান, ডিএমপির সাবেক কমিশনার মাইনুল হাসানসহ আরও অনেকে।
তালিকায় রয়েছেন মোট ৬২ জন কর্মকর্তা, যাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন। তাদের মধ্যে ওসি মনিরুল হক ডাবলুসহ কেবল হাতে গোনা কয়েকজন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা আছেন। এর ফলে পুলিশের ভেতরে আবারও প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ কি সততা ও সাহসিকতার মূল্যায়ন হচ্ছে? নাকি পদক শুধু দলীয় আনুগত্যের পুরস্কার হয়ে দাঁড়িয়েছে?