“নতুন বন্দোবস্ত”: আওয়ামী লীগ-বিচ্ছেদের রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব

বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্রপটে এক নতুন কথাবার্তা উঠে এসেছে — “নতুন বন্দোবস্ত”। আমাদেরকে এখন বুঝতে হবে এটি শুধুই একটি রাজনৈতিক স্লোগান নয়, বরং এক প্রকার মানসিক ও সাংস্কৃতিক ভাঙনের ঘোষণা, যার কেন্দ্রে রয়েছে আওয়ামী লীগ (Awami League) বিরোধিতা এবং দীর্ঘদিনের দলীয় আনুগত্য থেকে ধীরে ধীরে সরে আসার আহ্বান।

এই কথাটির মূল বক্তব্য স্পষ্ট: এখন সময় এসেছে আওয়ামী লীগকে আর সমর্থন না করার। শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে নয়, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে এই দলকে বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছে। এমনকি যাঁরা একসময় দলটিকে সমর্থন করতেন, তাঁদেরও বুঝতে হবে এখন সময় এসেছে সেই সমর্থন পুরোপুরি পরিত্যাগ করার।

“নতুন বন্দোবস্ত” – এই শব্দ যুগল যারা ব্যবহার করছে তারাও ঠিক কতটুকু তা বুঝে ব্যবহার করেছে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকলেও, দিনে দিনে এটিকে একটি রাজনৈতিক মানসিকতা পরিবর্তনের আন্দোলন হিসেবে তুলে ধরতে পারলেই এর সফলতা আস্তে পারে। এই চিন্তা অনুযায়ী, বর্তমান আওয়ামী লীগকে আর গণতন্ত্রের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না — বরং এটিকে একটি “ফ্যাসিস্ট শক্তি” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে গণতন্ত্রের ভাবনা, সংলাপ কিংবা বিকল্প ভাবনা তৈরি করতে গেলে আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখেই ভাবতে হবে।

আমাদেরকে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে এই “নতুন বন্দোবস্ত”’র অবস্থানটি কোনও আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া নয়; এটি বহুদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে গঠিত একটি পরিণত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এখানে মুখ্য হয়ে উঠেছে প্রশ্ন — একজন নাগরিকের রাজনৈতিক বিশ্বাস কি বারবার প্রতারিত হওয়ার পরও আগের জায়গায় থাকতে পারে? না কি সময় এসেছে একেবারে নতুন মানসিক কাঠামো গড়ে তোলার?

এই ভাবনার সূত্র ধরেই আসে “বাংলাদেশী মানুষের মানসিকতা থেকে আওয়ামীপনা বাদ দেওয়ার” মতো কঠিন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। দেশের মানুষের চিন্তা – চেতনায় যে ‘আওয়ামী ভাব’ রয়ে গেছে, তা সরানো হবে একটি সময়সাপেক্ষ কাজ — এর জন্য প্রয়োজন হতে পারে ১০ থেকে ২০ বছরের সংগ্রাম, আলোচনা এবং প্রজন্মান্তরের বিবর্তন। তবে সেই মানসিক পরিবর্তনের সূচনা এখন শুরু করতে পারলে আওয়ামী লীগের পরিণতিও মুসলিম লীগের মতো হবার সম্ভাবনাটা প্রবল।

সবাইকে মনে রাখতে হবে , এই নতুন প্রেক্ষাপটে, নতুন বাংলাদেশে, নতুন রাজনৈতিক আদর্শে প্রবেশ করার শুরুতে নিজেকে একা মনে হলেও, কেউই এক নন , তাজনৈতিল পথ পরিক্রমায় অনেককেই পেয়ে যেতে পারেন সঙ্গী হিসাবে। বিশেষ করে — অনেক আওয়ামী সহনিভুতিশীলরাই আদর্শগতভাবে মুক্ত হলেও বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে বন্দি। এটি সম্ভবত এক ধরনের সামাজিক পরাধীনতার প্রতিচ্ছবি, যেখানে মুক্তচিন্তার মধ্যেও রয়েছে আড়ষ্টতা। তাদেরকে এই আড়ষ্টতা থেকে মুক্তির পরিবেশ তৈরী করাটাও আমাদেরই দায়িত্ব।

এই ‘নতুন বন্দোবস্ত’-এর আলোচনায় উঠে এসেছে একটি অস্বস্তিকর, তবে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক উপলব্ধি: আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক শক্তি নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক ধরনের মানসিকতা — যা থেকে মুক্তি চাইলে দরকার রাজনৈতিক সাহস, সাংস্কৃতিক রূপান্তর, এবং এক নতুন জাতীয় চেতনার নির্মাণ।

— Collected and complied from Faham Abdus Salam’s Post

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *