তিন দশকের অচলাবস্থার অবসান: জাবি’র জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা

দীর্ঘ ৩২ বছরের নিষ্ক্রিয়তা ভেঙে অবশেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (Jahangirnagar University) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ—জাকসু (JACS) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান নির্বাচনের তফসিল প্রকাশ করেন। পাশে ছিলেন কমিশনের সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশেদুল আলম, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. লুৎফুল এলাহী এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।

তফসিল অনুযায়ী, ১২ মে প্রকাশ পাবে খসড়া ভোটার তালিকা ও আচরণবিধি। ২১ মে বিকাল ৫টার মধ্যে খসড়া তালিকা ও আচরণবিধি নিয়ে আপত্তি ও মতামত গ্রহণ করা হবে। এরপর ৩০ জুন প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ও আচরণবিধি। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, যা চলবে ৭ জুলাই পর্যন্ত। প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই, আপিল ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সব পর্যায় পেরিয়ে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩১ জুলাই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণ শেষে সেদিন রাতেই ভোট গণনা এবং ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. মনিরুজ্জামান জানান, ১৬ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে নির্বাচনী প্রচারণা। একইদিন প্রকাশ করা হবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকাও।

প্রক্টর ও কমিশনের সদস্য অধ্যাপক এ কে এম রাশেদুল আলম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পুরো ক্যাম্পাসকে সিসিটিভির আওতায় আনা হবে। এরই মধ্যে নিরাপত্তা জোরদারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নিরাপত্তারক্ষীদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. কামরুল আহসান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “জাহাঙ্গীরনগরে একটি নতুন ইতিহাস রচিত হতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন সিনেটে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব ছিল না। জাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে এবার পাঁচজন নির্বাচিত প্রতিনিধি সিনেটে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কথা বলবেন।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুর রব ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

এই নির্বাচনের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ পরিকল্পনা ও আলোচনার পরিণতি। ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় সিনেট হলে অনুষ্ঠিত ‘পরিবেশ পরিষদ: জাকসু নির্বাচন ২০২৫’ শীর্ষক বৈঠকে প্রায় ১১ ঘণ্টা আলোচনা শেষে ৩০ এপ্রিল সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তফসিল ঘোষণায় একমত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ১ মে রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় নির্বাচনের দিনক্ষণ।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯২ সালে। ১৯৯৩ সালে এক সিন্ডিকেট বৈঠকে বিশৃঙ্খলার কারণে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র আটবার অনুষ্ঠিত হয়েছে এই নির্বাচন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নবম জাকসু নির্বাচন, যা ক্যাম্পাস রাজনীতিতে একটি ঐতিহাসিক মোড়বদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *