সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচার ছাড়া দেশে নির্বাচন নয়: বায়তুল মোকাররমে এনসিপির ঘোষণা

আওয়ামী লীগের বিচার ও কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না—এমন কঠোর অবস্থান থেকে শুক্রবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জুমার নামাজের পর শুরু হওয়া এই রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তারা আওয়ামী লীগকে ‘খুনি’, ‘ফ্যাসিস্ট’, ‘গণহত্যাকারী’ আখ্যায়িত করে দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।

এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে দলের ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা থেকে আগত নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। মূল মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহসহ আরও অনেকে।

সমাবেশে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, “আন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে যে টালবাহানা চলছে, তা লজ্জাজনক। হাইকোর্টের দিকে তাকিয়ে থাকলে কোনো বিপ্লব আসে না। জনগণ গত বছরের ৫ আগস্টেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে—আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হবে।”

দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন বলেন, “খুনি হাসিনাকে আমরা বিদায় দিয়েছি। এই বিজয় আমাদের ধরে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে, কিন্তু ইনশা আল্লাহ, তারা আর বাংলার মাটিতে রাজনীতি করতে পারবে না।”

আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী বলেন, “খুনি হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করতে হবে। সংস্কার ছাড়া আরেকটি নির্বাচন শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে।”

আতিক মুজাহিদ বলেন, “রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আওয়ামী লীগ ও হাসিনার দোসররা হুমকি। এরা বাংলাদেশে থাকতে পারে না।”

দলের যুগ্ম সদস্যসচিব হুমায়রা নূর সরাসরি বলেন, “১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ জনগণকে শোষণ করেছে, ভোটের অধিকার হরণ করেছে। এখনই সময় এই দলটিকে নিষিদ্ধ করার। দিল্লির প্রেসক্রিপশনে আর বাংলাদেশ চলবে না।”

মাহিন সরকার বলেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে টালবাহানা বরদাস্ত করা হবে না। মৌলিক সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়।”

তাহসীন রিয়াজের মতে, আগামী দিনের রাজনীতি হবে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে মুছে ফেলার। তিনি সাংবাদিকদের প্রতিও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, যারা আওয়ামী লীগের পক্ষ নেয়, তাদের দেশ ছাড়তে হবে।

রফিকুল ইসলাম আইনী বলেন, “গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাই এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান সংস্কার হওয়া উচিত।”

আলী নাছের খানের মতে, “বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলবে কি না, সেটা শহীদ পরিবারের সদস্যরাই ঠিক করবেন।”

মোস্তাক আহমেদ শিশির বলেন, “আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের যে কোনো উদ্যোগ জুলাই যোদ্ধারা প্রতিহত করবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হবে না।”

সাইফুল্লাহ হায়দার আরও বলেন, “বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।”

এনসিপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আতাউল্লাহ বলেন, “এনসিপির একজন কর্মী জীবিত থাকতে আওয়ামী লীগ বাংলার মাটিতে রাজনীতি করতে পারবে না।”

জুলাই বিপ্লবের শহীদ খালেদ সাইফুল্লাহর বাবা কামরুল হাসান সমাবেশে এসে বলেন, “আমার ছেলেকে ৭০টি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার বিচার ছাড়া নির্বাচন নয়, স্বৈরাচারী হাসিনার কোনো জায়গা এ দেশে থাকবে না।”

সমাবেশজুড়ে বারবার উচ্চারিত হয়েছে স্লোগান—‘এই মুহূর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার’, ‘চব্বিশের বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই’, ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’।

এনসিপির নেতারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের বিচার এবং দলের মৌলিক সংস্কার ছাড়া দেশে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এই মূহূর্তে তাদের রাজনীতি যেন জুলায়ের উত্তাপ নিয়ে সামনে এগিয়ে চলছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *