নারী অবমাননার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠালো এনসিপি’র ৩ নেত্রী

নারী অবমাননার অভিযোগে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ (Hefazat-e-Islam Bangladesh) এর বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তিন নেত্রী এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তিন বিশিষ্ট নারী। সোমবার দুপুরে অ্যাডভোকেট পলাশের মাধ্যমে এই নোটিশ পাঠানো হয়।

নোটিশ প্রদানকারীরা হলেন, এনসিপি নেত্রী সৈয়দা নীলিমা দোলা, দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী ও নীলা আফরোজ এবং সংস্কৃতিকর্মী উম্মে রায়হানা, উম্মে ফারহানা ও ক্যামেলিয়া শারমিন চূড়া।

নোটিশের বিষয়ে ক্যামেলিয়া শারমিন চূড়া জানান, সাম্প্রতিক একটি জনসভায় হেফাজতের নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যে নারীদের উদ্দেশে অবমাননাকর, অশ্লীল ও গর্হিত ভাষা ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, “এ ধরনের বক্তব্য শুধু নারী সমাজের সম্মানহানিই নয়, এটি মানবাধিকার, সংবিধান ও সুস্থ সমাজের চেতনার বিরুদ্ধেও সরাসরি আঘাত।” তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, অবিলম্বে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে।

এক বিবৃতিতে নোটিশদাতারা জানান, নারী সংস্কার কমিশন নিয়ে ভিন্নমত থাকা স্বাভাবিক হলেও, জনসমাবেশে নারীদের ‘বেশ্যা’ আখ্যায়িত করা সরাসরি নারীর মর্যাদার ওপর আঘাত। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তারা বলেন, “নারী অধিকার ও লড়াইয়ের প্রতি এটি অবমাননা এবং জাতীয়ভাবে এটি নারীর স্বাধীনতার জন্য হুমকি।”

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সরকারের প্রস্তাবে গঠিত নারী সংস্কার কমিশন নিয়ে দ্বিমত থাকা সত্ত্বেও সভ্য আলোচনার বিকল্প নেই। নারীদের গালি দেওয়ার ঘটনা পুরো দেশের নারীসমাজের জন্য অশনিসংকেত। নেত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন, ইসলামী আইনের আলোকে হেফাজত নেতারা নিজেদের পরিবারের নারীদের সম্পত্তির অধিকার দিয়েছেন কিনা।

নোটিশে আরও বলা হয়, এটি সচেতন নাগরিকসমাজ ও সংস্কৃতিকর্মীদের তরফ থেকে একটি সুসংগঠিত প্রতিবাদ। এতে নারী বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ উম্মে ফারহানা বলেন, “নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ঘিরে প্রকাশ্য জনসভায় নারীদের গালি দেওয়া অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমরা নতুন সম্ভাবনার এক বাংলাদেশ আশা করেছিলাম যেখানে পাহাড়ি নারী থেকে শুরু করে সকল নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। অথচ অধিকার চাইলেই গালি—এটা মেনে নেওয়া যায় না।”

তিনি আরও বলেন, “পারিবারিক সম্পত্তিতে অধিকার, বৈবাহিক ধর্ষণ ও বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে নারীরা কথা বলায় পুরুষতান্ত্রিক উগ্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সাধারণত গোপনে কটূক্তি করা হলেও এবার প্রকাশ্যে গালি দেওয়া হয়েছে। এটা ইসলামিক মূল্যবোধের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।”

এনসিপি নেত্রী সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, “সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ভিন্নমত থাকা স্বাভাবিক, তবে জনসমাবেশে নারীদের ‘বেশ্যা’ বলে গালাগাল করার কোনো অধিকার নেই। এটি সরাসরি নারীর মর্যাদা ও লড়াইয়ের প্রতি আঘাত। নির্যাতিত নারীদের প্রতি সমাজ কী বার্তা দিচ্ছে, সেটাই এখন প্রশ্ন। আমাদের দলীয় অবস্থান এই ধরনের অপমানের বিপক্ষে সুস্পষ্ট।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *